জিহাদ ও কিতাল

ফরযে কিফায়াহ

ফরযে কিফায়াহ : যা চার প্রকার।-

(১) দ্বীনী ফরয : যেমন দ্বীনী ইলম শিক্ষা করা, ইসলামের সত্যতার বিরুদ্ধে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টির প্রতিবাদ করা, জানাযার ছালাত আদায় করা, ছালাতের জন্য আযান দেওয়া, জামা‘আত কায়েম করা ইত্যাদি।

(২) জীবিকা অর্জনের ফরয : যেমন কৃষিকাজ, শিল্পকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা বা অনুরূপ শিক্ষা ও উপায়-উপাদানসমূহ অর্জন করা। যা না করলে মানুষের দ্বীন ও দুনিয়া দু’টিই হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

(৩) এমন ফরয, যা আদায়ের জন্য শাসকের নির্দেশ শর্ত : যেমন ‘জিহাদ’ করা, শারঈ ‘হদ’ বা দন্ডবিধি প্রয়োগ করা ইত্যাদি।[1] কেননা এগুলিতে শাসকের একক অধিকার রয়েছে।

(৪) জিহাদে পিতা-মাতা ও ঋণদাতার অনুমতি গ্রহণ :

জিহাদ যখন ‘ফরযে কিফায়াহ’ বা ইচ্ছাধীন ফরযের বিষয়ে পরিণত হবে, তখন জিহাদে যাওয়ার জন্য পিতা-মাতার অনুমতি গ্রহণ আবশ্যিক হবে। বরং এমতাবস্থায় জিহাদে গমন ঐব্যক্তির জন্য মোটেই সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি স্বীয় পরিবার, সন্তান-সন্ততি ও পিতা-মাতার খিদমতের দায়িত্ব হ’তে মুক্ত হ’তে পারবে না।[2] হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমল আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বললেন, ওয়াক্ত মত ছালাত আদায় করা (অন্য বর্ণনায় এসেছে, আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা’[3])। আমি বললাম, তারপর কি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সেবা করা। বললাম তারপর কি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা’।[4] আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে এসে জিহাদে গমনের অনুমতি চাইল। রাসূল (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পিতা-মাতা জীবিত আছেন কি? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহ’লে তাঁদের মাঝেই জিহাদ কর (অর্থাৎ তাঁদের সেবা-যত্নে মনোনিবেশ কর)।[5] একইভাবে ইচ্ছাধীন জিহাদে গমনের পূর্বে ঋণদাতার অনুমতি প্রয়োজন হবে। কেননা শাহাদাত সকল গোনাহের কাফফারা হ’লেও ঋণের দায়িত্ব থেকে শহীদ ব্যক্তি মুক্ত নন।[6] সাইয়িদ সাবিক্ব বলেন, এমতাবস্থায় ঋণের সঙ্গে যুক্ত হবে তার অন্যান্য যুলুম সমূহ। যেমন মানুষ খুন করা, অন্যায়ভাবে জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করা ইত্যাদি (ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/৯১)

(৫) এমন ফরয, যা আদায়ের জন্য শাসকের অনুমতি শর্ত নয় : যেমন সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজে নিষেধ করা, নেকীর কাজে মানুষকে আহবান করা ও নিকৃষ্ট কর্ম সমূহ দূর করা ইত্যাদি।

এই সমস্ত কাজ প্রত্যেক মুমিনের উপরে ‘ফরযে আয়েন’ নয়। বরং উম্মতের কেউ সম্পাদন করলে অন্যের উপর থেকে ‘ফরযিয়াত’ দূরীভূত হয়।

এক্ষণে কোন্ কোন্ সময় জিহাদ প্রত্যেক মুমিনের উপরে ‘ফরযে আয়েনে’ পরিণত হয়, তা নিম্নে প্রদত্ত হ’ল।-


[1]. ফাৎহুল বারী হা/২৯৬৭ ‘জিহাদ’ অধ্যায়, ‘আমীরের অনুমতি গ্রহণ’ অনুচ্ছেদ ১১৩।

[2]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/৮৬; ফাৎহুল বারী ‘জিহাদ’ অধ্যায় ‘জিহাদে গমনে পিতামাতার অনুমতি গ্রহণ’ অনুচ্ছেদ ১৩৮।

[3]. আহমাদ, আবুদাঊদ প্রভৃতি, মিশকাত হা/৬০৭।

[4]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৬৮।

[5]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৮১৭।

[6]. মুসলিম, মিশকাত হা/৩৮০৬; ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/৮৬।