জিহাদ ও কিতাল

জিহাদের ফযীলত

(১) আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيْمٍ- تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি কি তোমাদের এমন একটি ব্যবসার কথা বলে দেব না, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হ’তে মুক্তি দেবে? তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমাদের মাল ও জান দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ’ (ছফ ৬১/১০-১১)

(২) তিনি বলেন,إِنَّ اللهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনের জান ও মাল খরিদ করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে। তারা লড়াই করে আল্লাহর রাস্তায়। অতঃপর তারা মারে ও মরে’ (তওবাহ ৯/১১১)

(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,إِنَّ فِى الْجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ أَعَدَّهَا اللهُ لِلْمُجَاهِدِينَ فِى سَبِيلِ اللهِ، مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ ، فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللهَ فَاسْأَلُوهُ الْفِرْدَوْسَ، فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الْجَنَّةِ وَأَعْلَى الْجَنَّةِ، أُرَاهُ فَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ، وَمِنْهُ تَفَجَّرَ أَنْهَارُ الْجَنَّةِ ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহ জান্নাতে একশতটি স্তর প্রস্ত্তত করে রেখেছেন। প্রতিটি স্তরের দূরত্ব আসমান ও যমীনের মধ্যকার দূরত্বের ন্যায়। অতএব যখন তোমরা প্রার্থনা করবে, তখন ‘ফেরদৌস’ প্রার্থনা করবে। কেননা এটিই হ’ল জান্নাতের মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ স্তর। এর উপরেই আমাকে আল্লাহর আরশ দেখানো হয়েছে। আর এখান থেকেই জান্নাতের নদীসমূহ প্রবাহিত হয়েছে’।[1]

(৪) তিনি বলেন مَا اغْبَرَّتْ قَدَمَا عَبْدٍ فِى سَبِيلِ اللهِ فَتَمَسَّهُ النَّارُ ‘যার পদযুগল আল্লাহর রাস্তায় ধূলি ধূসরিত হয়েছে, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না’।[2] ‘পদযুগল ধূলি ধূসরিত হওয়া’ অর্থ, দেহ-মন সবকিছু আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা।  যেমন অন্যত্র (৫) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَغَدْوَةٌ فِى سَبِيلِ اللهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا ‘আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল ও একটি সন্ধ্যা ব্যয় করা, দুনিয়া ও তার মধ্যকার সকল কিছু হ’তে উত্তম’।[3]

(৬) তিনি বলেন, الْقَتْلُ فِى سَبِيلِ اللهِ يُكَفِّرُ كُلَّ شَىْءٍ إِلاَّ الدَّيْنَ ‘আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়া সকল পাপকে মোচন করে ঋণ ব্যতীত।[4] 

(৭) তিনি বলেন, لاَ يُكْلَمُ أَحَدٌ فِى سَبِيلِ اللهِ- وَاللهُ أَعْلَمُ بِمَنْ يُكْلَمُ فِى سَبِيلِهِ- إِلاَّ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَجُرْحُهُ يَثْعَبُ، اللَّوْنُ لَوْنُ دَمٍ وَالرِّيحُ رِيحُ مِسْكٍ ‘কেউ আল্লাহর রাস্তায় আহত হ’লে, আর আল্লাহ ভালো জানেন কে তার রাস্তায় আহত হয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন সে এমন অবস্থায় আসবে যে, তার ক্ষতস্থান হ’তে রক্ত ঝরতে থাকবে। যার রং হবে রক্তের ন্যায়, কিন্তু সুগন্ধি হবে মিশকের ন্যায়’।[5]

(৮) রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করার পর তাকে পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ দেওয়া হলেও পুনরায় সে দুনিয়ায় ফিরে আসতে চাইবে না, শহীদ ব্যতীত। তাদের উচ্চ মর্যাদা দেখে সে দুনিয়ায় ফিরে আসতে চাইবে, যাতে সে দশবার শহীদ হ’তে পারে।[6]

(৯) আল্লাহ বলেন,وَلاَ تَحْسِبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِى سَبِيلِ اللهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ  ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত ধারণা করো না; বরং তারা জীবিত। তারা তাদের প্রতিপালক হ’তে জীবিকাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে’ (আলে ইমরান ৩/১৭৯)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তাদের আত্মাসমূহ সবুজ বর্ণের পাখির মধ্যে রক্ষিত হয় এবং তাদের জন্য আল্লাহর আরশের নীচে ফানুস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। অতঃপর তারা জান্নাতে যথেচ্ছ বিচরণ করে। পরে তারা আবার ঐসমস্ত ফানুসের দিকে ফিরে আসে। তখন তাদের রব তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে বলেন, তোমরা কি আরো কিছু চাও? উত্তরে তারা বলে, আমরা আর কিসের আকাংখা করব? আমরা তো জান্নাতের যেখানে খুশী বিচরণ করছি। আল্লাহ তাদেরকে এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করলে তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা চাই যে, আমাদের আত্মাগুলিকে পুনরায় আমাদের দেহের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। যেন আমরা পুনরায় আপনার রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হ’তে পারি। অতঃপর যখন আল্লাহ দেখবেন যে তাদের আর কিছু প্রয়োজন নেই, তখন তাদের ছেড়ে দিবেন’।[7]

(১০) তিনি বলেন, আল্লাহর নিকটে শহীদদের জন্য ৬টি বিশেষ পুরস্কার রয়েছে (ক) শহীদের রক্তের প্রথম ফোঁটা যমীনে পড়তেই তাকে মাফ করে দেওয়া হয় এবং জান বের হওয়ার প্রাক্কালেই তাকে জান্নাতের ঠিকানা দেখানো হয় (খ) তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করা হয় (গ) ক্বিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা হ’তে তাকে নিরাপদ রাখা হয় (ঘ) সেদিন তার মাথায় সম্মানের মুকুট পরানো হবে। যার একটি মুক্তা দুনিয়া ও তার মধ্যেকার সবকিছু হতে উত্তম (ঙ) তাকে ৭২ জন সুন্দর চক্ষুবিশিষ্ট হূরের সাথে বিয়ে দেওয়া হবে এবং (চ) ৭০ জন নিকটাত্মীয়ের জন্য তার সুফারিশ কবুল করা হবে।[8] 

(১১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, كُلُّ مَيِّتٍ يُخْتَمُ عَلَى عَمَلِهِ إِلاَّ الَّذِى مَاتَ مُرَابِطًا فِى سَبِيْلِ اللهِ فَإِنَّهُ يُنْمَى لَهُ عَمَلُهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَيَأْمَنُ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ ‘প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির আমল বন্ধ হয়ে যায় কেবল ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় পাহারারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। তার নেকী ক্বিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ঐ ব্যক্তি কবরের পরীক্ষা হ’তে নিরাপদ থাকে’।[9] এই নেকী ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত প্রহরী সৈনিক যেমন পাবেন, ইসলাম বিরোধী আক্বীদা ও আমল প্রতিরোধে নিহত বা মৃত ব্যক্তিও তেমনি পাবেন।


[1]. বুখারী, মিশকাত হা/৩৭৮৭; ফাৎহুল বারী হা/২৭৯০ ‘জিহাদ’ অধ্যায় ৪ অনুচ্ছেদ।

[2]. বুখারী, মিশকাত হা/৩৭৯৪ ‘জিহাদ’ অধ্যায়।

[3]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৭৯২ ‘জিহাদ’ অধ্যায়।

[4]. মুসলিম হা/১৮৮৬, মিশকাত হা/৩৮০৬।

[5]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৮০২ ‘জিহাদ’ অধ্যায়।

[6]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৮০৩।

[7]. মুসলিম হা/১৮৮৭; মিশকাত হা/৩৮০৪।

[8]. তিরমিযী হা/১৬৬৩, ইবনু মাজাহ হা/২৭৯৯, মিশকাত হা/৩৮৩৪।

[9]. তিরমিযী হা/১৬২১; মিশকাত হা/৩৮২৩।