জিহাদ ও কিতাল

মুমিনের করণীয়

এক্ষণে অমুসলিম বা ফাসেক মুসলিম উভয় সরকারের বিরুদ্ধে মুমিনের  কর্তব্য হ’ল- (১) উত্তম পন্থায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।[1] (২) দেশে ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য জনমত গঠন করা এবং বৈধপন্থায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। কেননা আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللهَ لاَ يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ আল্লাহ ঐ জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে’ (রা‘দ ১৩/১১)। (৩) বিভিন্ন উপায়ে সরকারকে নছীহত করা।[2] (৪) সরকারের হেদায়াতের জন্য দো‘আ করা।[3] (৫) সরকারের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকটে কুনূতে নাযেলাহ পাঠ করা।[4]

এভাবে সকল প্রকার বৈধ পন্থায় দেশে ইসলামী আইন ও বিধান প্রতিষ্ঠায় সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে। যাতে সরকার ইসলামী দাবীর প্রতি নমনীয় হয়। কিন্তু কোন অবস্থাতেই আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকারের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকা যাবে না।

উল্লেখ্য যে, প্রতিষ্ঠিত কোন মুসলিম সরকারকে উৎখাতের কোন বৈধতা ইসলাম দেয়নি। এজন্য জিহাদ ও ক্বিতালের নামে সশস্ত্র বিদ্রোহ বা চরমপন্থী তৎপরতার কোন অনুমতি ইসলামে নেই। সাথে সাথে ব্যালটের নামে যে দলাদলির নির্বাচন ব্যবস্থা বর্তমানে চলছে, তা স্রেফ প্রতারণামূলক ও যবরদস্তিমূলক। এতে সমাজে বিভক্তি ও হিংসা-হানাহানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গণপ্রত্যাশা ও মানবাধিকার প্রতিনিয়ত পদদলিত হচ্ছে। এজন্য আল্লাহভীরু ও যোগ্য ব্যক্তিদের পরামর্শের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করা এবং দল ও প্রার্থীবিহীন ইসলামী নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থার পক্ষে জনমত গঠন করা সবচেয়ে যরূরী।


[1]. মুসলিম হা/৪৯, মিশকাত হা/৫১৩৭।

[2]. মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৬৬।

[3]. যেমন রাসূল (ছাঃ)-কে দাউস গোত্রের বিরুদ্ধে বদদো‘আ করতে বলা হ’লে তিনি তাদের জন্য হেদায়াতের দো‘আ করে বলেন, اللهُمَّ اهْدِ دَوْسًا وَائْتِ بِهِمْ ‘হে আল্লাহ তুমি দাউস গোত্রকে হেদায়াত কর এবং তাদেরকে ফিরিয়ে আনো’। ছহীহ বুখারীর ভাষ্যকার ক্বাস্তালানী বলেন, পরে দেখা গেল যে, অভিযোগকারী তুফায়েল বিন আমর ফিরে গিয়ে নিজ কওমকে ইসলামের দাওয়াত দেন। তাতে তাদের শাসকসহ ৭০-৮০টি পরিবার মুসলমান হন ও ৭ম হিজরীতে খায়বরে এসে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হন। যার মধ্যে ছিলেন খ্যাতনামা ছাহাবী হযরত আবু হুরায়রা দাওসী (রাঃ)। =(বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৫৯৯৬; বুখারী (দিল্লী ছাপা) ২/৬৩০ টীকা-১১)।

[4]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১২৮৯। যেমন ৪র্থ হিজরীর ছফর মাসে সংঘটিত রাজী‘ ও বি’রে মাঊনার হৃদয়বিদারক দু’টি ঘটনা, যেখানে যথাক্রমে ১০ জন ও ৭০ জন ছাহাবীকে শঠতার মাধ্যমে হত্যাকারী আযল ও ক্বারাহ এবং রে‘ল ও যাকওয়ান গোত্রগুলির বিরুদ্ধে রাসূল (ছাঃ) মাসব্যাপী কুনূতে নাযেলাহ পাঠ করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ করেননি। এর জন্য কেউ কোন অনুযোগ করেনি বা রাসূল (ছাঃ)-কে ছেড়ে যায়নি।