জিহাদ ও কিতাল

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله وحده والصلاة والسلام على من لا نبي بعده وعلى آله

وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلي يوم الدين وبعد :

ভূমিকা

ইসলাম মানবজাতির জন্য আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম। যার সকল বিধান মানুষের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে নির্ধারিত। পক্ষান্তরে শয়তানী বিধান সর্বত্র অন্যায় ও অশান্তির বিস্তৃতি ঘটিয়ে থাকে। যা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে হটিয়ে জাহান্নামের পথে নিতে চায়। সেকারণ আল্লাহ মুসলমানকে ‘ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ’-এর দায়িত্ব প্রদান করেছেন এবং তাকে শয়তানের বিরুদ্ধে সর্বদা জিহাদে লিপ্ত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। জিহাদ ও সন্ত্রাস দু’টি বিপরীতধর্মী বিষয়। জিহাদ হয় মানব কল্যাণের জন্য এবং সন্ত্রাস হয় শয়তানী অপকর্মের জন্য। জিহাদ হ’ল ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই ইবাদতকেই শয়তান সবচেয়ে বেশী ভয় পায়। সেকারণ নানা কৌশলে শয়তান মুসলমানের জিহাদী জাযবাকে ধ্বংস করতে চায়। বর্তমান যুগে ইসলামী জিহাদকে ‘জঙ্গীবাদ’ হিসাবে চিহ্নিত করাটাও শয়তানী তৎপরতার একটি অংশ মাত্র। একটি পরাশক্তি তার প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক পরাশক্তিকে আফগানিস্তান থেকে হটানোর জন্য অঢেল অর্থ ব্যয় করে ও আধুনিক অস্ত্রের যোগান দিয়ে গত শতাব্দীর শেষদিকে জিহাদের নামে ‘তালেবান’ সৃষ্টি করে। পরে উদ্দেশ্য হাছিল হয়ে গেলে তাদেরকে সন্ত্রাসী জঙ্গীদল বলে আখ্যায়িত করে। একই পলিসি মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুসৃত হচ্ছে। তাদের টার্গেটকৃত মুসলিম রাষ্ট্রটিকে জঙ্গীরাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে তাদের স্বার্থ হাছিলের কপট উদ্দেশ্যে পরাশক্তিগুলি এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে বলে সরকারের অভিজ্ঞ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের প্রকাশিত মন্তব্যে জানা যায়।

বর্তমানে স্টিং অপারেশনের নামে তারা নিজেদের দেশে মুসলিম তরুণদের পিছনে গোয়েন্দা লাগিয়ে বন্ধু বেশে তাদেরকে সেদেশের বিভিন্ন স্থাপনায় ভুয়া বোমাবাজিতে লিপ্ত করছে। অতঃপর তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করছে। বিশ্বকে জানিয়ে দিচ্ছে যে, মুসলিম মানেই জঙ্গী।

এছাড়া তাদের চক্রান্তের অসহায় শিকার হচ্ছে বিভিন্ন মুসলিম দেশের স্বল্পবুদ্ধি তরুণ সমাজ। অনেক সময় বিদেশীরা তাদের এদেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে এদেরকে ধর্মের নামে জিহাদ ও ক্বিতালে উসকে দেয়। অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে লালন করে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলে। অতঃপর তাদেরই অদৃশ্য ইঙ্গিতে এরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এবং মিডিয়ার সংবাদ শিরোনামে পরিণত হয়। আসল হোতারা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরপর দেশের সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে বিদেশী আধিপত্যবাদীরা তাদের অন্যায় স্বার্থ হাছিল করে। অন্যদিকে তারা বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে মুসলিম ঐক্য ভেঙ্গে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে ও একে অপরের শত্রু বানিয়ে দিচ্ছে।

গণতন্ত্রী ও জঙ্গী উভয় দলের লক্ষ্য ক্ষমতা দখল করা। অথচ ঐ লক্ষ্যটাই ইসলামে নিষিদ্ধ। দুনিয়াবী লক্ষ্যে কোন কাজই আল্লাহর নিকটে গ্রহণীয় নয়। ক্ষমতা ও নেতৃত্ব আল্লাহ প্রদত্ত নে‘মত। তা চেয়ে নেবার বা আদায় করে নেবার বিষয় নয়। এর মধ্যে প্রতারণা বা যবরদস্তির কোন অবকাশ নেই। অথচ উক্ত কারণেই সর্বত্র নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে হানাহানি চলছে। এবিষয়ে ইসলামের নিজস্ব নীতি-আদর্শ ও রীতি-পদ্ধতি রয়েছে। সেটি যথার্থভাবে অনুসরণ করলে নেতৃত্বের কোন্দল ও ক্ষমতার লড়াই থেকে জাতি রক্ষা পাবে ইনশাআল্লাহ।

ইসলামে শৈথিল্যবাদ ও চরমপন্থা কোনটারই অবকাশ নেই। আল্লাহ বলেন, আমরা তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত করেছি। যাতে তোমরা মানবজাতির উপরে (ক্বিয়ামতের দিন) সাক্ষী হ’তে পার এবং রাসূলও তোমাদের উপর সাক্ষী হন’ (বাক্বারাহ ২/১৪৩)। সাক্ষ্যদাতা উম্মত সর্বদা মধ্যপন্থী হয়ে থাকে। আর এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে মুসলিম উম্মাহর ‘শ্রেষ্ঠ জাতি’ হওয়ার চাবিকাঠি (আলে ইমরান ৩/১১০)। কিন্তু কিছু মানুষ ক্ষমতা দখলকেই ‘বড় ইবাদত’ এবং ‘সব ফরযের বড় ফরয’ বলে থাকেন। যেভাবেই হৌক ক্ষমতা দখলই তাদের মূল লক্ষ্য। সেকারণ চরমপন্থাকে তারা অধিক পসন্দ করেন। এদের কারণে ইসলামের শত্রুরা ইসলামকে জঙ্গীবাদী ধর্ম হিসাবে অপপ্রচারের সুযোগ পেয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধে আমরা উক্ত ধারণা অপনোদনের চেষ্টা করব। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন- আমীন! 

বিনীত

      লেখক।