যে সকল হারামকে মানুষ হালকা মনে করে

টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা

মানুষ যেসব কাজকে লঘু মনে করে অথচ আল্লাহর নিকটে সেগুলি খুবই গুরুতর, তন্মধ্যে টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা একটি। অনেকের কাপড় এত লম্বা যে, তা মাটি স্পর্শ করে। কেউবা আবার পরিধেয় বস্ত্র দ্বারা পিছন থেকে মাটি সমান করতে করতে যায়। টাখনুর নীচে এভাবে কাপড় ঝুলিয়ে পরা হারাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ- الْمُسْبِلُ (وفي رواية إزاره) وَالْمَنَّانُ [وفى رواية : اَلَّذِىْ لاَ يُعْطِىْ شَيْئًا إِلاَّ مِنْهُ] وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ-

‘তিন প্রকার লোকের সাথে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা হ’ল- টাখনুর নীচে কাপড় (অন্য বর্ণনায় লুঙ্গী) পরিধানকারী, খোঁটাদানকারী (অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে খোঁটা না দিয়ে কোন কিছু দান করে না) ও মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়কারী’।[1]

যে বলে, ‘আমার টাখনুর নীচে কাপড় পরা অহংকারের প্রেক্ষিতে নয়’ তার এ সাফাই গাওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা অহংকার বশেই হৌক, আর এমনিতেই হৌক শাস্তি তাতে সমানই হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا تَحْتَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِ فَفِى النَّارِ ‘টাখনুর নীচে কাপড়ের যেটুকু থাকবে তা জাহান্নামে যাবে’।[2]

এই হাদীছে অহংকার ও নিরহংকারের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি। আর জাহান্নামে গেলে শরীরের কোন অংশবিশেষ যাবে না; বরং সমগ্র দেহই যাবে। অবশ্য অহংকার বশে যে টাখনুর নীচে কাপড় পরবে তার শাস্তি তুলনামূলকভাবে কঠোর ও বেশী হবে। এ কথাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাণীতে এসেছে,

مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -

‘যে ব্যক্তি অহংকার বশে তার লুঙ্গি মাটির সাথে টেনে নিয়ে বেড়াবে, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আরা তার প্রতি দৃষ্টি দিবেন না’।[3] বেশী শাস্তি এজন্য হবে যে, সে এক সঙ্গে দু’টি হারাম কাজ করেছে। এক- টাখনুর নীচে কাপড় পরা, দুই- অহংকার প্রদর্শন। পরিমিত পরিমাণ থেকে নীচে ঝুলিয়ে যেকোন বস্ত্র পরিধান করাই ‘ইসবালে’র আওতাভুক্ত এবং তা হারাম। ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

اَلْإِسْبَالُ فِى الإِزَارِ وَالْقَمِيصِ وَالْعِمَامَةِ، مَنْ جَرَّ مِنْهَا شَيْئًا خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-

‘লুঙ্গি, জামা ও পাগড়ীতে ইসবাল (ঝুলিয়ে পরা) রয়েছে। এগুলি থেকে যেকোন একটিকে কোন ব্যক্তি অহংকার বশে টেনে-ছেঁচড়ে নিয়ে বেড়ালে ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার প্রতি সদয় দৃষ্টি দিবেন না’।[4]

স্ত্রীলোকদের জন্য পায়ের সতরের সুবিধার্থে এক বিঘত কিংবা এক হাত পরিমাণ ঝুলিয়ে দেবার অবকাশ আছে। কেননা বাতাস বা অন্য কোন কারণে সতর খোলার ভয় থাকলে অতিরিক্ত কাপড়ে তা বহুলাংশে রোধ হবে। তবে সীমালংঘন করা তাদের জন্যও বৈধ হবে না। যেমন বিয়ে-শাদীতে পরিহিত বস্ত্রের ক্ষেত্রে মেয়েদের সীমালংঘন করতে দেখা যায়। সেগুলি পরিমিত পরিমাণ থেকে কয়েক বিঘত এমনকি কয়েক মিটার লম্বা হয়। অনেক সময় পেছন থেকে তা বয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়।


[1]. মুসলিম হা/১০৬; মিশকাত হা/২৭৯৫।

[2]. নাসাঈ হা/৫৩৩০; আহমাদ হা/২০১৮০।

[3]. বুখারী হা/৩৬৬৫, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৩১১।

[4]. আবুদাঊদ, নাসাঈ; মিশকাত হা/৪৩৩২।