যে সকল হারামকে মানুষ হালকা মনে করে

মদ্যপান[1]

আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর বা লটারী অপবিত্র শয়তানী কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। সুতরাং তোমরা এগুলি থেকে বিরত থাক। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে’ (মায়েদাহ ৯০)

মদ্যপান হতে বিরত থাকার আদেশ প্রদান তা হারাম হওয়ার অন্যতম শক্তিশালী দলীল। আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে মদের সঙ্গে মূর্তির কথা উল্লেখ করেছেন। মূর্তি কাফেরদের উপাস্য ও দেব-দেবীর সাধারণ নাম। মূর্তি পূজা হারাম হেতু মদ্যপানও হারাম। তাই উক্ত আয়াতে আল্লাহ উল্লিখিত জিনিসগুলো হারাম করেননি বরং বিরত থাকতে বলেছেন বলে এত্থেকে গা বাঁচানোর কোন উপায় নেই।

মদ্যপান সম্পর্কে হাদীছেও কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) বলেছেন,

إِنَّ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَهْدًا لِمَنْ يَشْرَبُ الْمُسْكِرَ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ طِينَةِ الْخَبَالِ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا طِينَةُ الْخَبَالِ؟ قَالَ : عَرَقُ أَهْلِ النَّارِ أَوْ عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ-

‘যে ব্যক্তি মদ্যপান করে তার জন্য আল্লাহর অঙ্গীকার হল, তিনি তাকে ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ পান করাবেন। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ কি? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের ঘাম অথবা পুঁজ-রক্ত’।[2]

ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مُدْمِنُ الْخَمْرِ إِنْ مَاتَ لَقِىَ اللهَ كَعَابِدِ وَثَنٍ ‘শরাবপায়ীরূপে যে মারা যাবে, (ক্বিয়ামতে) সে একজন মূর্তিপূজকের ন্যায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে’।[3]

আমাদের যুগে হরেক রকম মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি বেরিয়েছে। তাদের নামও আরবী, আজমী বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। যেমন- বিয়ার, হুইস্কি, চুয়ানি, তাড়ি, ভদকা, শ্যাম্পেন, কোডিন, মরফিন, প্যাথেড্রিন, হেরোইন, ড্রাগ ইত্যাদি।

নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, لَيَشْرَبَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِى الْخَمْرَ يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا ‘নিশ্চয়ই আমার উম্মতের কিছু লোক মদ পান করবে, তারা উহার ভিন্ন নামকরণ করে নেবে’।[4]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী উক্ত নাম পাল্টিয়ে মদ পানকারী মুসলমানও বর্তমান যামানায় প্রকাশ পেয়েছে। তারা উহার নাম দিয়েছে ‘রুহানী টনিক’ বা ‘জীবনী সুধা’। অথচ এটা নিছক মিথ্যার উপর প্রলেপ প্রদান ও প্রতারণা মাত্র। এই সমস্ত প্রতারকদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

يُخَادِعُونَ اللهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلاَ أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ-

‘তারা আল্লাহ ও ঈমানদারদের সাথে প্রতারণা করে অথচ তারা যে নিজেদের সাথেই প্রতারণা করছে তা তারা অনুধাবন করতে পারছে না’ (বাক্বারাহ ৯)

মদ কি এবং তার বিধান কি হবে শরী‘আতে তার পরিপূর্ণ নীতিমালা তুলে ধরা হয়েছে, যাতে ফিৎনা ও দ্বন্দ্বের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। এই নীতিমালা হ’ল- كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ ‘প্রত্যেক নেশার দ্রব্যই ‘খামর’ বা মদ এবং প্রত্যেক নেশার দ্রব্যই হারাম’।[5]

সুতরাং যা কিছু মস্তিষ্কের সঙ্গে মিশে জ্ঞান-বুদ্ধিকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে তাই হারাম। চাই তা কম হৌক বা বেশী হৌক;[6] তরল পদার্থ হৌক কিংবা কঠিন পদার্থ হৌক। এসব নেশার দ্রব্যের নাম যাই হৌক মূলতঃ এগুলো সবই এক এবং এসবের বিধানও এক।

পরিশেষে মদ্যপায়ীদের উদ্দেশ্যে নবী করীম (ছাঃ)-এর একটি উপদেশবাণী তুলে ধরা হল। তিনি বলেছেন,

مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ وَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا وَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ رَدْغَةِ الْخَبَالِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا رَدْغَةُ الْخَبَالِ؟ قَالَ : عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ-

‘যে ব্যক্তি মদ পান করে ও নেশাগ্রস্ত হয় তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে জাহান্নামে যাবে। আর যদি তওবা করে তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। পুনরায় যদি সে মদ পান করে ও নেশাগ্রস্ত হয় তবে তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। পুনরায় সে যদি মদ পান করে ও নেশাগ্রস্ত হয় তবে তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। পুনরায় যদি সে মদ পান করে তবে তাকে ক্বিয়ামত দিবসে ‘রাদগাতুল খাবাল’ পান করানো আল্লাহর জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে। ছাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)! ‘রাদগাতুল খাবাল’ কি? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের দেহ নিঃসৃত পুঁজ-রক্ত’।[7]

এই যদি হয় সাধারণ নেশায় অভ্যস্ত ব্যক্তিদের পরিণতি, তবে ঐ সমস্ত লোকদের পরিণতি কেমন হবে, যারা গুরুতরভাবে নেশার দ্রব্যে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং অবিরতভাবে তা পান করে থাকে।


[1]. মদ তথা নেশার দ্রব্যাদি আধুনিক সভ্যতার এক নিদারুণ অভিশাপ। নেশার আবেশে আজকের পৃথিবী তলিয়ে যাচ্ছে। যতই আইন-কানূন করে ও বিরুদ্ধ প্রচার চালিয়ে বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে, ততই যেন প্রতিনিয়ত তা প্রসার লাভ করছে। বর্তমান সভ্যতার মুখে এ এক নির্লজ্জ চপেটাঘাত। অথচ বহু পূর্বেই ইসলাম শুধু মদ পান করাই হারাম করেনি; বরং এর উৎপাদন ও বেচা-কেনা পর্যন্ত হারাম করেছে এবং পানকারীর জন্য দৈহিক শাস্তি নির্ধারণ করেছে। -অনুবাদক

[2]. মুসলিম; মিশকাত হা/৩৬৩৯।

[3]. আহমাদ; মিশকাত হা/৩৬৫৬, সনদ হাসান।

[4]. আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৪২৯২।

[5]. মুসলিম; মিশকাত হা/৩৬৩৮।

[6]. (مَا أَسْكَرَ كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَامٌ) আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৩৬৪৫।

[7]. ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩১৩।