যে সকল হারামকে মানুষ হালকা মনে করে

জুয়া

আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,

إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ-

‘নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, বেদী, ভাগ্য নির্ণায়ক তীর অপবিত্র শয়তানী কাজ। সুতরাং তোমরা তা থেকে বিরত থাক। তাতে তোমরা সফলকাম হবে’ (মায়েদা ৯০)

জাহেলী যুগের লোকেরা জুয়া খেলায় ভীষণ অভ্যস্ত ছিল। জুয়ার যে পদ্ধতি তাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল তা হ’ল, তারা দশ জনে সমান অংক দিয়ে একটা উট ক্রয় করত, সেই উটের গোশত ভাগ-বাঁটোয়ারার জন্য জুয়ার তীর ব্যবহার করা হ’ত। এটা এক প্রকার লটারী। ১০টি তীরের ৭টিতে কম-বেশী করে বিভিন্ন অংশ লেখা থাকত এবং তিনটিতে কোন অংশই লেখা থাকত না। ফলে তিনজন কোন অংশ পেত না এবং অন্য সাত জন তাদের প্রচলিত নিয়মে কম-বেশী অংশ পেত। এভাবে তারা দশ জনের টাকায় কেনা উট সাত জনে ভাগ করে নিত।

বর্তমানে জুয়ার নানা পদ্ধতি বের হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ।-

লটারী : লটারী খুবই প্রসিদ্ধ জুয়া। লটারী নানা রকম আছে। তন্মধ্যে ব্যাপকতর হচ্ছে, নির্দিষ্ট অংকের টাকা কিংবা দ্রব্য পুরস্কারের নামে প্রদানের বিনিময়ে নির্দিষ্ট নম্বরের কুপন ক্রয়-বিক্রয়। নির্দিষ্ট তারিখে বিক্রিত কুপনগুলির ড্র অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম যে নম্বরের কুপনটি ওঠে সে প্রথম পুরস্কার পায়। এভাবে ক্রমানুযায়ী উদ্দিষ্ট সংখ্যক পুরস্কার দেয়া হয়। পুরস্কারের অংকগুলিতে প্রায়শঃ তারতম্য থাকে। এই লটারী হারাম, যদিও আয়োজকরা একে ‘কল্যাণকর’ মনে করে।

বীমা : বর্তমানে বাজারে নানারকম বীমা বা ইনস্যুরেন্স চালু আছে। যেমন জীবন বীমা, যানবাহন বীমা, পণ্য বীমা, অগ্নি বীমা ইত্যাদি। এমনকি অনেক গায়ক তাদের কণ্ঠস্বর পর্যন্ত বীমা করে থাকে। নানান ঝুঁকি হতে নিরাপত্তার জন্য এ ব্যবসা এখন জমজমাটভাবে চলছে।

পণ্যের মধ্যে অজ্ঞাত সংকেত : কোন কোন পণ্যের মধ্যে অজ্ঞাত নম্বর কিংবা সংকেত দেওয়া থাকে। ক্রেতারা ঐসব পণ্য খরিদের পর সেই বস্ত্ত কিংবা নম্বরটা পেলে কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কয়েকজনকে পুরস্কৃত করার জন্য ঐসব বস্ত্ত বা নম্বরের লটারী করে থাকে। অনেক সময় কোন কোন উৎপাদক কোম্পানী তাদের উৎপাদিত পণ্যের বহুল প্রসারের জন্য হাযার হাযার পণ্যের কোন একটিতে পুরস্কারের সংকেত রেখে দেয়। সেই সংকেতটি পাওয়ার আশায় বহু মানুষ তা কেনায় মেতে ওঠে। পরে দেখা যায় দু’একজনের বেশী কেউ পায় না। এরূপ বিক্রয়ে ক্রেতারা প্রতারিত হয় এবং সেই সাথে প্রতিযোগী কোম্পানী সমূহের ব্যবসায়ে ক্ষতি করা হয়।

উল্লিখিত জুয়া ছাড়াও যত প্রকার জুয়া আছে সবই কুরআনে বর্ণিত ‘মাইসির’-এর অন্তর্ভুক্ত হবে। বর্তমানে জুয়ার জন্য বিশেষভাবে অনেক আসর বসে, যা কোথাও ‘হাউজি’ কোথাও ‘সবুজ টেবিল’ নামে পরিচিত। ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধূলার প্রতিযোগিতায় যে বাজী ধরা হয় তাও জুয়ার অন্তর্গত। আবার খেলাধূলার এমন অনেক দোকান ও বিনোদন কেন্দ্র আছে যেখানে জুয়ার চিন্তাধারায় গড়ে উঠা নানারকম খেলনা সামগ্রী রয়েছে। যেমন- ফ্লাস, পাশা ইত্যাদি।

আর মানুষ যেসব প্রতিযোগিতা করে থাকে তা তিন প্রকার। যথা :

এক : শারঈ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য প্রসূত প্রতিযোগিতা। যেমন উট ও ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা, তীরন্দাযী ও নিশানার প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। শারঈ বিদ্যা যেমন কুরআন হিফয প্রতিযোগিতাও আলিমদের অগ্রাধিকারযোগ্য মতানুসারে এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

এ জাতীয় প্রতিযোগিতা পুরস্কার সহ কিংবা পুরস্কারবিহীন যেভাবেই হৌক মুবাহ বা বৈধ হবে।

দুই : মূলে মুবাহ এমন সব প্রতিযোগিতা। যেমন ফুটবল প্রতিযোগিতা, দৌড় প্রতিযোগিতা। তবে এগুলি হারাম শূন্য হতে হবে। যেমন এসব খেলা করতে কিংবা দেখতে গিয়ে ছালাত বিনষ্ট করা কিংবা সতর খোলা হারাম। পুরস্কার ছাড়া এসব প্রতিযোগিতা জায়েয।

তিন : মূলে হারাম কিংবা মাধ্যম হারাম এমন সব প্রতিযোগিতা। যেমন বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে নষ্ট প্রতিযোগিতা, রেসলিং বা মুষ্টিযুদ্ধের প্রতিযোগিতা। মুষ্টিযুদ্ধ প্রতিযোগিতায় মুখমন্ডলে আঘাত করা হয়, অথচ মুখমন্ডলে আঘাত করা হারাম।[1] সুতরাং মুষ্টিযুদ্ধ হারামের মাধ্যম একটি প্রতিযোগিতা। অনুরূপভাবে মেষের লড়াই, মোরগের লড়াই, ষাঁড়ের লড়াই ইত্যাদিও এ শ্রেণীভুক্ত।


[1]. বুখারী হা/২৫৫৯, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫২৫।