ইসলামী আন্দোলনে বিজয়ের স্বরূপ

হতাশা, নৈরাশ্য, তারপর নিষ্কর্মা

দ্বীন প্রচারের রাস্তা দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য। এটা নানা চড়াই-উতরাই, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও দুঃখ-কষ্টে পরিপূর্ণ। তাই কম প্রচারককেই দেখা যায়, তারা স্বীয় প্রচার কাজে অবিচল ও দা‘ওয়াতী কর্মপদ্ধতিকে অাঁকড়ে থেকে এই রাস্তা অতিক্রম করতে পেরেছেন। দেখা যায়, একজন প্রচারক প্রচার কাজে লিপ্ত হয়ে কয়েক বছর পার হওয়ার পরও যখন তার প্রচার কাজের সামান্য অগ্রগতিও দেখতে না পায় এবং একের পর এক কৌশল অবলম্বন করেও কোন ফল অর্জিত না হয়, তখন সে সন্দেহের চোরাবালিতে নিপতিত হয়। এমতাবস্থায় কখনও সে নিজেকে দোষারোপ করে, কখনও তার জাতিকে, আবার কখনও নিজের অনুসারী ও সহযোগীদের। পরিশেষে সে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, এসব লোকের জন্য দা‘ওয়াত কোন কাজে আসবে না, তারা কোন প্রচারকের দা‘ওয়াতে সাড়া দেবে না। সে নিজের মনকে এই বলে প্রবোধ দিতে থাকে যে, ‘তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট, তোমাকে  শুধু নিজের ভাবনাই ভাবতে হবে। সুতরাং অন্যদের সালাম জানাও’। সে আল্লাহর বাণী,  لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ ‘তাদের সৎপথ গ্রহণের দায়িত্ব আপনার উপর নয়’ (বাক্বারাহ ২/২৭২) -এর অর্থ অনুধাবনে ভুলের শিকার হয় এবং আল্লাহর বাণী لاَيَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ، ‘তোমরা সৎপথে পরিচালিত হ’লে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’ (মায়েদাহ ৫/১০৫)-কে যথাস্থানে প্রয়োগ না করে অপপ্রয়োগ করে।

এভাবে ঐ প্রচারক তার জাতি সম্বন্ধে হতাশ হয়ে পড়ে। আল্লাহ যে তাদের হেদায়াত করবেন, এমন আশা আর তার মনে জাগে না। ফলে সে প্রচারকার্য থেকে হাত গুটিয়ে হাত বসে থাকে এবং স্বজাতি ও তাদের কর্মকান্ডকে এড়িয়ে চলতে থাকে।

সাহায্য ও বিজয়ের তাৎপর্য উপলব্ধিতে ব্যর্থতাই তার এই পরিণামের মূল কারণ। সে বুঝতে পারে না যে, তার জাতি তার আহবানে সাড়া না দেওয়া সত্ত্বেও সে তাদের নেতিবাচক কর্মকান্ডে ধৈর্য ধারণ করলে তা তার চাহিদা মত তাদের ঈমান আনয়ন ও তার অনুগামী হওয়া থেকে তার জন্য অনেক বেশী দামী পারিতোষিক, সঞ্চয় ও সাহায্য বলে বিবেচিত হ’তে পারে।

উল্লিখিত বিষয়গুলি ছাড়াও আরো অনেক বিষয় আছে, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘প্রচার কাজে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়’ সম্বন্ধে ভুল ধারণা থেকে জন্মলাভ করেছে। অনেক প্রচারকই দ্বীনের বিজয় ও প্রচারকের বিজয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। বর্ণিত আলোচনা হ’তে উপরিক্ত বিষয়ের গুরুত্ব, প্রচারক ও জ্ঞান পিপাসুদের জন্য একে ফুটিয়ে তোলা ও বিশদ বর্ণনার প্রয়োজনীয়তা ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে কুরআন মজীদে এমন বহু আয়াত রয়েছে, যা বিজয় ও সাহায্যের অর্থ, প্রচারকের করণীয় এবং সেই করণীয় কাজ আর তার ফলাফল ও প্রভাবের মধ্যকার পার্থক্যকে তুলে ধরেছে।