হাদীছের প্রামাণিকতা

উপমহাদেশে হাদীছ বিরোধী সংগঠন সমূহ

  (فرق المنكرين في الحديث في شبه القارة الهندية)

উপমহাদেশে হাদীছ বিরোধীদের কেন্দ্রস্থল ছিল ভারতের আলীগড়, অমৃতসর প্রভৃতি শহর। কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে এটি পাকিস্তানের লাহোরে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে বসে তারা ইসলামের নামে অর্জিত  পাকিস্তানের  নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে লিপ্ত হয়। ভারতেও এর রেশ চলতে থাকে। পাশ্চাত্য বিশ্বে এর অপপ্রচার ব্যাপ্তি লাভ করে। উর্দূভাষী না হওয়ায় বাংলাভাষী মুসলমানগণের অধিকাংশ এদের করাল থাবা থেকে বেঁচে গেছে। কিন্তু ইতিমধ্যে এদের কারু কারু বই বাংলাভাষায় অনুদিত হয়ে ব্যাপকহারে প্রচারিত হওয়ায় তরুণ ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী সমাজের অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন এবং দেশে হাদীছ বিরোধী মনোভাব ক্রমে মাথাচাড়া দিচ্ছে।

বর্তমানে হাদীছ বিরোধীদের কয়েকটি ফের্কা পাকিস্তানে সংগঠিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যেমন :

. আহলে কুরআন (فرقہ أهل قرآن)

আব্দুল্লাহ চকড়ালবী প্রতিষ্ঠিত এই দলের পুরো নাম ‘আহলুয্ যিকরে ওয়াল কুরআন’ যার বর্তমান নেতা মুহাম্মাদ আলী রাসূল লাক্ভী। পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে এর অফিস রয়েছে। এ দলের মুখপত্র ‘বালাগুল কুরআন’ (بلاغ القرآن) পত্রিকার মাধ্যমে এদের ভ্রান্ত আক্বীদা পাকিস্তানে সর্বত্র প্রচারিত হচ্ছে। অথচ কুরআনেরই নির্দেশ অনুযায়ী রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত অনুসরণ করা ফরয। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহ’লে তিনি তোমাদেরকে ভালবাসবেন ও তোমাদের গোনাহসমূহ মাফ করে  দিবেন’ (আলে ইমরান ৩/৩১)।

. উম্মাতে মুসলিমাহ (فرقہ أمة  مسلمة)

আব্দুল্লাহ চকড়ালবীর অনুসারী খাজা আহমদ দ্বীন প্রথমে ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবের অমৃতসরে এই দলের গোড়াপত্তন করেন। ১৯৪৭-এর পরে এই দল লাহোরে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এখানেই তাদের প্রধান কেন্দ্র এবং ‘ফায়যে ইসলাম’ (فيض إسلام) পত্রিকা তাদের প্রধান মুখপত্র।

. তাহরীকে তা‘মীরে ইনসানিয়াত (فرقہ تعمير إنسانيت)

আব্দুল খালেক মালূহ কর্তৃক লাহোরে প্রতিষ্ঠিত এই দলের তরুণ ও তুখোড় নেতা ক্বাযী কেফায়াতুল্লাহ উর্দূ, আরবী ও ইংরেজীতে বহু বই লিখে তার দলের আদর্শ প্রচার করে চলেছেন।

. ফের্কা তুলূ‘এ ইসলাম (فرقہ طلوع  إسلام)

গোলাম আহমাদ পারভেয কর্তৃক প্রথমে হিন্দুস্তানে প্রতিষ্ঠিত এই দলটির নেতারা ১৯৪৭-এর পরে লাহোরে এসে তাদের ভ্রান্ত  আক্বীদার প্রচার শুরু করেন এবং পাকিস্তানের প্রায় সকল শহরে শাখা কায়েম করেন। ইউরোপের বিভিন্ন শহরেও এ দলের শাখা রয়েছে। যেখান থেকে হাদীছ বিরোধী আক্বীদা সমূহ নিয়মিতভাবে প্রচার করা হয়। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম আহমাদ পারভেয ৩০ টির উপর বই লেখেন। যার কোন কোনটি ৩ বা ৪ খন্ডে সমাপ্ত। তবে এই দলের দবদবা অনেকটা হরাস পেয়েছে দলের প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে ১৯৬১ সালে প্রায় এক হাযার ওলামায়ে কেরামের সম্মিলিতভাবে ‘কুফরী’ ফৎওয়া প্রদানের কারণে। করাচীর ‘মাদরাসা ‘আরাবিয়া ইসলামিয়াহ’ এই মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করে।