হাদীছের প্রামাণিকতা

بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীছের প্রামাণিকতা

عَنْ أَبِىْ رَافِعٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يَأْتِيْهِ الأَمْرُ مِنْ أَمْرِى مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ فَيَقُوْلُ لاَ أَدْرِى مَا وَجَدْنَا فِى كِتَابِ اللهِ اتَّبَعْنَاهُ ، رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُوْ دَاؤُدَ وَالتِّرْمِذِىُّ-

অনুবাদ : আবু রাফে‘ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘আমি যেন তোমাদের কাউকে এরূপ না দেখি যে, সে তার গদীতে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে, আর তার কাছে আমার কোন আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা পৌঁছলে সে বলবে যে, আমি এসব কিছু জানিনা। যা আল্লাহর কিতাবে পাব, তারই আমরা অনুসরণ করব’।[1]

হাদীছের ব্যাখ্যা :

উপরোক্ত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একটি ভবিষ্যদ্বাণী বিধৃত হয়েছে যে, মুসলমানদের মধ্যকার একদল লোক হাদীছকে অগ্রাহ্য করবে এবং  নিজেদেরকে শুধু কুরআনের অনুসারী বলে দাবী করবে। এর অন্তর্নিহিত কারণও উক্ত হাদীছে ইঙ্গিতে বলে দেওয়া হয়েছে যে, ঐসব লোকেরা হবে বিলাসী ও দুনিয়াদার। এরা হাদীছে বর্ণিত ইসলামের বিস্তারিত আদেশ ও নিষেধাবলীর পাবন্দী হ’তে নিজেদেরকে মুক্ত করে নিজ নিজ স্বেচ্ছাচারিতা বহাল রাখার জন্য কুরআনের অনুসারী হওয়ার দাবী করবে। কারণ কুরআনে মূল বিষয়গুলিই মাত্র বর্ণিত হয়েছে, ব্যাখ্যা আসেনি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় কথা, কর্ম ও সম্মতিমূলক আচরণের মাধ্যমে কুরআনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও বাস্তব নমুনা পেশ করে গেছেন। এমনকি কুরআনে বর্ণিত হয়নি, এমন অনেক বিষয় রাসূল (ছা্ঃ) কর্তৃক নির্দেশিত হয়েছে, যা উম্মতের জন্য অবশ্য পালনীয়। কেননা কুরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন,

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا، (الحشر 7)- ‘আমার রাসূল তোমাদের নিকটে যা নিয়ে আসেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক’ (হাশর ৫৯/৭)

অথচ উক্ত লোকগুলি মুখে ও কলমে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রশংসাগীতি গাইলেও তাঁর আদেশ-নিষেধ থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখার জন্য বিভিন্ন চোরাপথ তালাশ করে। আর সেকারণে তারা হাদীছকে প্রকাশ্যে অথবা পরোক্ষে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করে।

দ্বিতীয়তঃ কুরআনের ব্যাখ্যা যদি হাদীছে না আসত, তাহ’লে এই সব পন্ডিত লোকগুলি কুরআনের ইচ্ছামত ব্যাখ্যা করতে পারত, যেভাবে ইহুদী-নাছারা পন্ডিতেরা তাওরাত-ইঞ্জীলের করেছে। তারা কেবল অপব্যাখ্যাই করেনি বরং মূল তাওরাত-ইঞ্জীলের মধ্যে শব্দ ও বাক্য সংযোজন ও বিয়োজন করে উক্ত এলাহী গ্রন্থদ্বয়কে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। ফলে ইহুদী-নাছারাগণ মূল তাওরাত-ইঞ্জীল থেকে বঞ্চিত হয়ে তাদের ধর্মযাজকদের পায়রবী করছে। ইসলামকেও যাতে অনুরূপ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যায়, সেজন্য ‘আলেম’ নামধারী স্বার্থদুষ্ট কিছু দুনিয়াদার লোক হাদীছকে তাদের স্বেচ্ছাচারিতার পথে প্রধান অন্তরায় বিবেচনা করে হাদীছের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই এ ষড়যন্ত্র চলে আসছে, যা আজও অব্যাহত আছে। এই ষড়যন্ত্রের ধরণ ও পদ্ধতি বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন রূপ হয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ও প্রচারমূলক আন্দোলন ছাহাবাযুগ থেকে এযাবত অব্যাহত রয়েছে, যা ইতিহাসে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ নামে পরিচিতি।

দুনিয়ায় প্রেরিত ১ লক্ষ ২৪ হাযার পয়গাম্বর ও তন্মধ্যকার ৩১৫ জন রাসূলের কারুরই পূর্ণাঙ্গ জীবনী ও তাঁদের কথা, কর্ম ও সম্মতিমূলক আচরণসমূহ সুরক্ষিত নেই একমাত্র মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ব্যতীত। কারণ তিনি হ’লেন শেষনবী, বিশ্বনবী ও পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের বাস্তব রূপকার। মূলতঃ ইসলামের পূর্ণাঙ্গতা ও কুরআনের সর্বযুগীয় সমাধান হওয়া নির্ভর করছে হাদীছের বিদ্যমানতা ও বিশুদ্ধতার উপরে । আর সেকারণ আল্লাহ তাঁর প্রেরিত অহি-র হেফাযতের দায়িত্ব নিজ হাতে নিয়েছেন (হিজ্র ১৫/৯)। যা তিনি অন্যান্য এলাহী কিতাবের জন্য নেননি। কুরআন ও হাদীছ দু’টিই আল্লাহর ‘অহি’ এবং দু’টিই আমরা একই নবীর মুখ দিয়ে শুনেছি। অতএব দু’টিই অভ্রান্ত এবং দু’টিরই হেফাযতের দায়িত্ব খোদ আল্লাহ গ্রহণ করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কিছু বাছাইকৃত বান্দা ক্বিয়ামত পর্যন্ত যুগে যুগে এর হেফাযত, খেদমত, অনুসরণ ও বাস্তবায়নে জীবনপাত করে যাবেন, এটাই তাঁর প্রকাশ্য ওয়াদা (বাক্বারাহ ২/১০৫)। আল্লাহ আমাদেরকে উক্ত দলের অন্তর্ভুক্ত করুন-আমীন।



১. আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী; সনদ ছহীহ, মিশকাত, আলবানী হা/১৬২; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৫৪ ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘কিতাব ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ।