গল্পের মাধ্যমে জ্ঞান

ন্যায়পরায়ণ শাসক

ওমর ফারূক (রাঃ) কূফায় একজন গভর্ণর নিয়োগ করেছিলেন। এমনিতেই সমস্ত ছাহাবা ন্যায়পরায়ণ, সৎ ও নিষ্ঠাবান ছিলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে গভর্ণর আরো একধাপ অগ্রগামী ছিলেন। তাঁর চোখে বিচারাদি সহ সকল বিষয়েই ধনী-গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, উঁচু-নীচু এবং ছোট-বড় সমান ছিল। কোন ব্যাপারে কারো কোন তোয়াক্কা না করে ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচারাদি ও শাসন কাজ  চালাতেন। এতে করে এক শ্রেণীর হোমড়া-চোমড়া ও ধনাঢ্য ব্যক্তি অসন্তষ্ট হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করল। তারা বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পারল, গভর্ণর ওমর (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করার জন্য মদীনা যাবেন। এই সুযোগে চাঁদা তুলে দুই হাযার দীনার জমা করে তাদের কয়েকজন মদীনা যাত্রা করল। সেখানে পৌঁছে গভর্ণর যখন ওমর ফারূক (রাঃ)-এর সাথে দেখা করার জন্য গেলেন, তখন তারাও সেখানে হাযির হল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কারা? কোথা থেকে এসেছেন? কি চান? তারা বলল, আমরা কূফার নাগরিক এবং সেখান থেকেই এসেছি। তেমন কোন কাজ নেই। বেড়াতে এসেছি এবং সামান্য একটি ব্যাপার নিয়ে আপনার সাথে দেখা করতে আসলাম। তিনি বললেন, কোন্ ব্যাপারে? তারা বলল, আপনার এই অলী (গভর্ণর) বায়তুল মালের সম্পদ আত্মসাৎ করে আমাদের নিকট এই দুই হাযার দীনার জমা রেখেছিল। ওটা আপনাকে ফেরৎ দিতে এলাম। ফারূকে আযম (রাঃ) গভর্ণরকে প্রশ্ন করলেন, তাদের অভিযোগ কি সত্য? তিনি বললেন, না তারা মিথ্যা বলেছে। আমি ওদের নিকট চার হাযার দীনার জমা রেখেছিলাম। কিন্তু তারা দুই হাযার আত্মসাৎ করে বাকী দুই হাযার জমা দিতে এসেছে। ওমর ফারূক (রাঃ) বললেন, তুমি একাজ কেন করলে? তিনি উত্তরে বললেন, আমি মরে যাবার পর ছেলে-মেয়েদের জীবিকা যেন ভালভাবে চলে সেজন্য। তারা গভর্ণরকে বিপদে ফেলতে এসে নিজেরাই বিপাকে পড়ে গিয়েছে ভেবে আমীরুল মুমিনীন ওমর ফারূক (রাঃ)-এর নিকট ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন, আপনার এই অলী (গভর্ণর) খুবই কড়া শাসক। শাসন কাজ চালাতে গিয়ে আমাদের কোন পরামর্শ নেন না এবং আমাদের মান-সম্মানের দিকে লক্ষ্য রেখে একটুও এদিক-ওদিক করেন না। এতে করে আমাদের মান-সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, কাজেই তাকে আমাদের ওখান থেকে সরাবার জন্য আমরা চাঁদা তুলে দুই হাযার দীনার জমা করে এই ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিলাম। আসলে উনি আমাদের নিকট দুই হাযার তো দূরের কথা দুই দীনারও রাখেননি। ওমর ফারূক (রাঃ) উক্ত গভর্ণরকে লক্ষ্য করে বললেন, কি ব্যাপার! তিনি উত্তরে বললেন, এখন ওরা ঠিক বলছে। ফারূকে আযম তাঁর গভর্ণরের বুদ্ধিমত্তা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। সে কিভাবে শত্রুর মুখ থেকেই তার সততা ও ওদের চক্রান্তের কথা বের করে নিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে অলী! তুমি কেন এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করলে? তিনি উত্তরে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন, তারাতো কয়েকজন। একজন দাবী পেশ করেছে, তার সাথে ক’জন সাক্ষী আছে। কিন্তু আমারতো সাক্ষী নেই। কাজেই কৌশল অবলম্বন ছাড়া আরতো কোন উপায় ছিল না। আমীরুল মুমিনীন তাঁকে ধন্যবাদ জানালেন।

শিক্ষা : ন্যায়পরায়ণ শাসকের কাছে ধনী-গরীব সবাই সমান। তিনি সৎভাবে রাষ্ট্র চালালে আল্লাহপাক তাকে যেকোন বিপদ-আপদে সাহায্য করবেন।