গল্পের মাধ্যমে জ্ঞান

পরিণামদর্শী ক্রীতদাস

জগতে যারা নিজেদের নাম অমর করে রেখেছেন, তারা কর্তব্যে অবহেলা করেননি। সময়ের কাজ সময়ে করেছেন। আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে রাখেননি।

এক সময় হাটে-বাজারে গরু-ছাগলের মত মানুষ কেনাবেচা হ’ত। এক লোক ছোট্ট একটি ছেলেকে কিনে নিয়ে যায়। ছেলেটি মালিকের অধীনে কাজ করে যৌবনে পদার্পণ করেছে। একদিন মালিকের একমাত্র পুত্র পানিতে পড়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়। ক্রীতদাস যুবকটি নিজের জীবন বাজি রেখে মনিবের ছেলেকে মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করে। মনিব ক্রীতদাসের এ কাজে খুশী হয়ে তাকে দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত করে দেন।

ক্রীতদাস তার নিজের পরিচয় সম্বন্ধে অজানা। কে তার মাতা-পিতা? কোথায় তার বাড়ী? এ সম্বন্ধে সে কিছুই জানে না। তাই সে মুক্তি পেয়ে নিজেকে বিব্রত মনে করল। তবুও সে সাগরের কিনারা ধরে যাত্রা শুরু করল। কিছুদূর অগ্রসর হ’লে সমুদ্রগামী এক জাহাজ এসে তার সামনে ভিড়ল। জাহাজে কিছু লোকজন ছিল। তারা তাকে জোর করে জাহাজে উঠিয়ে গভীর সমুদ্রে জাহাজ চালনা করল। অতঃপর একটি জনবহুল দ্বীপে এসে জাহাজ ভিড়াল। সেখানে বহু লোকজন উপস্থিত ছিল। তারা যখন জানতে পারল একজনকে ধরে আনা হয়েছে, তখন তারা উল্লাসে ফেটে পড়ল। তারা উল্লাস করতে করতে ধৃত যুবককে শহরে নিয়ে গিয়ে সিংহাসনে বসাল। তারা বলতে লাগল, আজ থেকে আপনি আমাদের রাজা। আগামী পাঁচ বছর আপনি আমাদের রাজা থাকবেন। এ সময়ে আমরা আপনার যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলব।

তাদের কথা শুনে ক্রীতদাস জিজ্ঞেস করল, পাঁচ বছর পর আমি কি করব? আমাকে তখন কি কাজে লাগানো হবে? জবাবে তারা বলল, পাঁচ বছর পর আপনাকে আবার জাহাজে উঠিয়ে একটি নির্জন দ্বীপে রেখে আসা হবে। আমাদের দেশের এটাই নিয়ম। যুবকটি বলল, অতীতে এভাবে কতজনকে রেখে আসা হয়েছে? জবাবে তারা বলল, বহুসংখ্যক লোককে। কিন্তু তারা কেউ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কিন্তু যখন মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছে, তখন কেবল কেঁদেছে আর সময় বাড়িয়ে দিতে অনুরোধ করেছে। কিন্তু আমরা আমাদের নিয়ম-নীতির কোন পরিবর্তন করি না। নিয়ম পরিবর্তন করা হ’লে নিয়মের গুরুত্ব থাকে না।

যুবকটি তাদের কথা শুনে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল, শুরু থেকেই কাজ করতে হবে। তাই সে বলল, আমি যদি লোক পাঠিয়ে সে নির্জন দ্বীপ আবাদযোগ্য করে গড়ে তুলি, তাতে কি আপনারা সম্মত আছেন। সবাই এক বাক্যে বলে উঠল, অবশ্যই।

যুবকটি দেশ শাসন করার সাথে সাথে তাকে যে দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হবে, সে দ্বীপটি রাজত্বের উপযোগী করে গড়ার কাজ শুরু করে দিল। সে পাঁচ বছর ধরে এ কাজ চালিয়ে গেল। অবশেষে যখন তার পাঁচ বছর রাজত্বের মেয়াদ ফুরিয়ে এল, তখন তাকে বেশ প্রফুল্ল দেখা গেল। কেননা নির্বাসিত দ্বীপে তাকে মেয়াদ মোতাবেক রাজত্ব করতে হবে না; জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সে সেখানে রাজত্ব করতে পারবে।

তাকে জাহাজে উঠিয়ে নির্বাসিত দ্বীপে রাখতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে এক বিরাট জনতা তাকে অভ্যর্থনা জানাতে ঘাটে সমবেত হয়েছে। সে জাহাজ হ’তে অবতরণ করলে জনতার হর্ষধ্বনিতে ঘাট মুখরিত হয়ে উঠল।

শিক্ষা : পরিণাম ভেবে কাজ করলে ফল ভাল পাওয়া যায়।