গল্পের মাধ্যমে জ্ঞান

কৃপণ ও নিঃস্ব

অনেক দিন আগের কথা। আরব দেশে ছিল এক কৃপণ ব্যক্তি। তার ধন-সম্পদ ছিল অঢেল। হঠাৎ একদিন কোথাও যাওয়ার পথে তার একটা থলে হারিয়ে গেল। পথ চলার সময় এক নিঃস্ব ব্যক্তি থলেটি পেলেন। গরীব হ’লে কি হবে লোক হিসাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৎ ও আল্লাহভীরু। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তিনি থলের প্রকৃত মালিক ঐ কৃপণ ধনাঢ্য ব্যক্তিকে খুঁজে পেয়ে তার টাকা তাকে ফেরত দিলেন। টাকা পেয়ে তো সে খুশীতে আটখানা। হঠাৎ তার মাথায় চিন্তা ঢুকল যে, লোকটি যে এত কষ্ট করে থলেটি আমার কাছে পৌঁছে দিয়েছে তাই তাকে অবশ্যই কিছু বখশীশ দিতে হবে। কিন্তু কৃপণতাহেতু বখশীশ না দেয়ার জন্য সে কূটবুদ্ধি আঁটল। নিঃস্ব লোকটিকে অপবাদের স্বরে বলল, ‘থলেতে তো ২০২০ দিরহাম ছিল। আপনি তা থেকে ২০ দিরহাম নিয়েছেন। তাই আর কোন বখশীশ দিতে পারছি না। আপনার জন্য ঐ ২০ দিরহামই যথেষ্ট’।

লোকটি তার এ কথায় অত্যন্ত মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে কৃপণের বিরুদ্ধে কাযীর আদালতে মানহানির অভিযোগ ঠুকলেন। বিচারক কৃপণকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার থলেতে কত টাকা ছিল? উত্তরে সে বলল, ২০২০ দিরহাম। আবার জিজ্ঞেস করলেন, এখন কত আছে? সে বলল, ২০০০ দিরহাম, বাকী ২০ দিরহাম ঐ ব্যক্তি নিয়েছে। এবার বিচারক নিঃস্ব ব্যক্তিটিকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি সত্যিই থলে থেকে ২০ দিরহাম নিয়েছেন? উত্তরে তিনি বললেন, এ ধরনের কোন ইচ্ছা যদি আমার থাকত, তাহ’লে পথে কুড়িয়ে পাওয়া থলেটি আমি তাকে কোন দুঃখে ফেরৎ দিলাম। সততার কারণেই অনেক খোঁজাখুঁজি করে থলের মালিককে তা ফিরিয়ে দিয়েছি। আল্লাহর শপথ! থলে থেকে আমি এক দিরহামও নেইনি।

বিজ্ঞ বিচারক উভয়ের বক্তব্য শুনে দুষ্ট কৃপণ লোকটির উদ্দেশ্যে বললেন, আপনি যেহেতু বলছেন আপনার থলেতে ২০২০ দিরহাম ছিল, আর উনি থলেতে পেয়েছেন ২০০০ দিরহাম। কাজেই থলেটি আপনার নয়, অন্য কারো হয়ে থাকবে। অতঃপর তিনি নিঃস্ব সৎ লোকটিকে বললেন, আপনি যদি এক বছরের মধ্যে থলের প্রকৃত মালিককে খুঁজে পান তাহ’লে তা তাকে ফেরত দিবেন। আর না পেলে আপনি নিজেই তা গ্রহণ করবেন।

কাযী ছাহেবের কথা শুনে কৃপণ তার মিথ্যা বলার দোষ স্বীকার করে পুনরায় থলে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চালালো। কিন্তু বিচারক তার কোন কথাই আর শুনলেন না।

শিক্ষা : কৃপণতা মানুষের মন্দ স্বভাব। কৃপণতা সম্পদ বাড়ায় না বরং কমায়। তাই সর্বদা কৃপণতা বর্জন করা উচিত।