গল্পের মাধ্যমে জ্ঞান

সম্রাট বাবরের মহত্ত

১৫২৬ খৃষ্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবর দিল্লীর সম্রাট ইবরাহীম লোদীকে পরাজিত করে দিল্লীর সিংহাসন লাভ করেন। ভারতের বাইরের মুসলিম সম্রাটগণ বহুবার ভারতের বিভিন্ন অংশে অভিযান চালিয়ে বহু ধন-সম্পদ হস্তগত করে আবার স্বদেশে ফিরে গেছেন। কিন্তু সম্রাট বাবর এর ব্যতিক্রম ছিলেন। তাঁর মধ্যে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কোন লক্ষণ দেখা গেল না। রাজা সংগ্রাম সিংহ রীতিমত চিন্তিত হয়ে পড়ল। সে বাবরকে বেশি শক্তিশালী হ’তে আর সময় দিতে চাইল না। তাই সে বাবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। যুদ্ধে সংগ্রাম সিংহ পরাজিত ও নিহত হ’ল। ফলে বাবর আরো শক্তিশালী হ’লেন।

এদিকে পরাজয়ের গ্লানিতে ক্ষুব্ধ রাজপুতদের মধ্য থেকে এক যুবক মনে করল, বাবরকে সরাসরি যুদ্ধে পরাজিত করা যাবে না। তাই ছদ্মবেশ ধারণ করে তাঁর প্রাণ সংহার করতে হবে। যুবক বাবরের রক্তে জন্মভূমির পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলতে চাইল। তাই সে বাবরের সন্ধানে ছুরিসহ ছদ্মবেশে দিল্লীর রাজপথে ঘুরে বেড়াতে লাগল। বাবরকে ছুরিকাঘাতে নিহত করাই তার একমাত্র পণ।

একদিন সে দিল্লীর রাজপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন সময় দেখতে পেল, জনগণ রাজপথ ছেড়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে। রাজপথে পাগলা হাতী ছুটে চলেছে। তারই ভয়ে জনগণের এই ছুটোছুটি। এদিকে পথে একটি শিশু পড়ে আছে। ভয়ে কেউ শিশুটিকে উদ্ধার করতে এগুচ্ছে না। সবাই হায় হায় করে বলতে লাগল যে, শিশুটি হাতির পদতলে পিষ্ট হয়ে মারা যাবে। কে একজন শিশুটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তাকে নিরস্ত করা হ’ল। বলা হল, অচ্ছুৎ মেথরের ছেলেকে ছুঁয়ো না।

এমন সময় জনতার ব্যুহ ভেদ করে কে একজন সাহসী ব্যক্তি দ্রুতগতিতে শিশুটিকে উঠিয়ে জনতার কাতারে মিশে গেলেন। হাতীটি হুংকার করতে করতে চলে গেল। পরে জানা গেল সেই সাহসী ব্যক্তিটি ছিলেন স্বয়ং সম্রাট বাবর।

স্বচক্ষে এ দৃশ্য দেখে যুবকটির ভাবান্তর হ’ল। উদ্ধারকর্তাকেও সে চিনতে পারল। তিনিই সে ব্যক্তি যাঁর প্রাণ সংহার করতে সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যুবকটি তৎক্ষণাৎ তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে স্থির করল যে, সে বাবরের কাছে তার পরিচয় দিয়ে দিল্লীর রাজপথে তার ঘুরে বেড়ানোর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করবে। পরিণাম যাই-ই হৌক তাতে তার কিছু যায় আসে না। তাই সে ধীরপদে বাবরের সামনে এল এবং লুক্কায়িত ছুরি বের করে বাবরের সামনে রাখল। অতঃপর বলল, এই ছুরির আঘাতে আমি আপনার প্রাণনাশ করতে চেয়েছিলাম। আপনার মহত্ত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি উপলব্ধি করলাম, প্রাণনাশের চেয়ে প্রাণরক্ষা করাই মহৎ কাজ। বাবর যুবককে বুকে টেনে নিলেন এবং তাঁর দেহরক্ষী হিসাবে নিয়োজিত করলেন।

শিক্ষা : মহত্ত্ব নিজেই এমন একটি মহৎ গুণ, যা মহৎ ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরও মহৎ করে তুলে।