ফিরক্বা নাজিয়াহ

আহলেহাদীছ অর্থ

‘আহলুল হাদীছ’ অর্থ হাদীছের অনুসারী। পারিভাষিক অর্থে, ছহীহ হাদীছের অনুসারী’। তিনি মুহাদ্দিছ বিদ্বান হ’তে পারেন কিংবা ছহীহ হাদীছের অনুসারী সাধারণ ব্যক্তিও হ’তে পারেন। উক্ত দলের সাথে বিদ‘আতী দল সমূহের আক্বীদাগত পার্থক্য রয়েছে। যেমন আহলেসুন্নাত বা আহলেহাদীছের নিকট ‘ঈমান’-এর পারিভাষিক অর্থ হ’ল,اَلْإِيْمَانُ هُوَ التَّصْدِيْقُ بِالْجَنَانِ وَالْإِقْرَارُ بِاللِّسَانِ وَالْعَمَلُ بِالْأَرْكَانِ، يَزِيْدُ بِالطَّاعَةِ وَيَنْقُصُ بِالْمَعْصِيَّةِ، اَلْإِيْمَانُ هُوَ الْأَصْلُ وَالْعَمَلُ هُوَ الْفَرْعُ- ‘হৃদয়ে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের সমন্বিত নাম হ’ল ঈমান। যা আনুগত্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ও গোনাহে হরাসপ্রাপ্ত হয়। বিশ্বাস ও স্বীকৃতি হ’ল মূল এবং কর্ম হ’ল শাখা।’ যা না থাকলে পূর্ণ মুমিন বা ইনসানে কামেল হওয়া যায় না।

এর বিপরীতে প্রধান দু’টি বিদ‘আতী দল হ’ল খারেজী ও মুর্জিয়া। খারেজীগণ বিশ্বাস, স্বীকৃতি ও কর্ম তিনটিকেই ঈমানের মূল হিসাবে গণ্য করেন। ফলে তাদের মতে কবীরা গোনাহগার ব্যক্তি কাফের ও চিরস্থায়ী জাহান্নামী এবং তাদের রক্ত হালাল’। যুগে যুগে সকল চরমপন্থী ভ্রান্ত মুসলমান এই মতের অনুসারী। এরাই হযরত আলী (রাঃ)-কে কাফের বলেছিল ও তাঁর রক্ত হালাল মনে করে তাঁকে হত্যা করেছিল। অপর দু’জন ছাহাবী হযরত আমর ইবনুল ‘আছ ও হযরত মু‘আবিয়া (রাঃ) এদের হত্যা তালিকায় ছিলেন। কিন্তু তাঁরা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

পক্ষান্তরে মুর্জিয়াগণ কেবল বিশ্বাস অথবা স্বীকৃতিকে ঈমানের মূল হিসাবে গণ্য করেন। যার কোন হরাস-বৃদ্ধি নেই। তাদের মতে আমল ঈমানের অংশ নয়। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এই মত পোষণ করেন। সে কারণ তাঁকে ও তাঁর অনুসারী ‘হানাফী’ দলকে শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী, আব্দুল করীম শাহরাস্তানী ও অন্যান্য বিদ্বানগণ মুর্জিয়া ফের্কার ১২টি উপদলের অন্যতম হিসাবে গণ্য করেছেন।[1] তাদের নিকট কবীরা গোনাহগার ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন। আবুবকর (রাঃ)-এর ঈমান ও একজন ফাসেক-এর ঈমান সমান। ঈমানের দিক দিয়ে পরস্পরে কোন তারতম্য নেই’।[2] আমলের ব্যাপারে সকল যুগের শৈথিল্যবাদী ভ্রান্ত মুসলমানরা এই আক্বীদার অনুসারী। আর সঙ্গত কারণেই সকল যুগে এই দলের সংখ্যা বেশী।

খারেজী ও মুর্জিয়া দুই চরমপন্থী ও শৈথিল্যবাদী মতবাদের মধ্যবর্তী হ’ল আহলেহাদীছের ঈমান। যাদের নিকট বিশ্বাস ও স্বীকৃতি হল মূল এবং কর্ম হ’ল শাখা। অতএব কবীরা গোনাহগার ব্যক্তি তাদের নিকট কাফের নয় কিংবা পূর্ণ মুমিন নয়, বরং ফাসেক অর্থাৎ গোনাহগার মুমিন। কবীরা গোনাহ থেকে খালেছ তওবা করলে সে পূর্ণ মুমিন হ’তে পারবে। এমনকি তওবা না করে মারা গেলেও সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়। বস্ত্ততঃ এটাই হ’ল কুরআন ও সুন্নাহর অনুকূলে।

মোটকথা ফের্কা নাজিয়াহ তারাই যারা বিশ্বাস ও কর্মে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের অনুসারী হবে এবং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের প্রকাশ্য অর্থের যথার্থ আমলকারী হবে। সাথে সাথে জীবনের সকল দিক ও বিভাগকে সেই অনুযায়ী ঢেলে সাজাবার জন্য চূড়ান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আর এটার জন্য কোন রং, বর্ণ, ভাষা, অঞ্চল বা গোত্র শর্ত নয়। বরং নিরপেক্ষভাবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সনিষ্ঠ অনুসারী হওয়াটাই শর্ত। তারা পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে যেকোন সুন্নী দলের মধ্যে থাকতে পারেন।


[1]. কিতাবুল গুনিয়াহ (মিসর : ১৩৪৬ হিঃ) ১/৯০ পৃঃ; কিতাবুল মিলাল (বৈরূত : দারুল মা‘রিফাহ, তাবি) ১/১৪৬ পৃঃ; হাক্বীক্বাতুল ফিক্বহ (বোম্বাই : তাবি) পৃঃ ৩৬-৩৯।

[2]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনু তায়মিয়াহ ৬/৪৭৯ পৃঃ।