ফিরক্বা নাজিয়াহ

সংশয় নিরসন

অনেকে ভাবেন, তার দল আদর্শচ্যুত হলেও কিংবা সেখানে আক্বীদা ও আমল পরিশুদ্ধির কোন প্রচেষ্টা না থাকলেও ঐদল ছেড়ে কোন ছহীহ-শুদ্ধ দলে যাওয়া যাবে না কিংবা অনুরূপ কোন জামা‘আত গঠন করা যাবে না। আবার কেউ ছহীহ-শুদ্ধ আক্বীদা সম্পন্ন দল থেকে খোঁড়া অজুহাতে বেরিয়ে গিয়ে নতুন দল গড়েন ও ভাঙেন। সেই সাথে কুরআন-হাদীছের অপব্যাখ্যা করেন ও মানুষকে ধোঁকা দেন। অনেকে শিরক ও বিদ‘আতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থেকেও নিজেকে সুন্নী বা ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’ এমনকি ‘আহলেহাদীছ’ দাবী করেন। কেউ কুরআনে বর্ণিত ‘মুসলেমীন’ (হজ্জ ৭৮) ও হাদীছে বর্ণিত ‘জামা‘আতুল মুসলেমীন’[1]-এর অর্থ না বুঝে ঐ নামে দল গড়ে নিজেদেরকেই মাত্র ইসলামী জামা‘আত বা মুসলিম জামা‘আত দাবী করেন ও অন্যদেরকে কাফের ধারণা করেন। কেউ আল্লাহর হুকুম ‘আক্বীমুদ্দীন’ (শূরা ১৩; তোমরা তাওহীদ কায়েম কর)-এর অর্থ ‘হুকুমত কায়েম কর’ বলেন এবং তাদের রাজনৈতিক দলে যোগ না দিলে তাকে নবীযুগের ইহূদীদের ন্যায় কাফের গণ্য করেন। কেউ কুরআনে বর্ণিত ‘উখরিজাত লিন্নাস’ (আলে ইমরান ১১০; যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য) ও ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ (ছফ ১১; আল্লাহর রাস্তায়)-এর কদর্থ করে মানুষকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছেন ও দিনের পর দিন দেশে-বিদেশে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরাচ্ছেন। সেই সাথে শুনাচ্ছেন কোটি কোটি নেকী ও ফযীলতের মিথ্যা বয়ান। কেউ ভিত্তিহীন কাহিনী ও জাল-যঈফের প্রচারকেই তাবলীগ ভাবেন ও ছহীহ হাদীছের তাবলীগকে ফিৎনা মনে করেন। কেউ ‘জিহাদ ও ক্বিতাল’-এর অপব্যাখ্যা করে তাদের দৃষ্টিতে কবীরা গোনাহগার মুসলিম নেতাদের হত্যা করার মধ্যেই জান্নাত তালাশ করেন।

অথচ বাস্তবতা এই যে, প্রায় সকলেই যেকোন মূল্যে নিজেদের ভুলের উপর টিকে থাকেন। সঠিক বিষয়ের দিকে ফিরে যেতে চান না। কেউ বলেন, ‘এটাও ঠিক ওটাও ঠিক’। কিন্তু সঠিক বিষয়টির দিকে নিজেরাও যান না, অন্যকেও যেতে দেন না। এভাবেই শয়তান সর্বদা মানুষকে ধোঁকায় ফেলে রাখে। যাতে সে মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করতে না পারে। এভাবে তারা দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলেছে। এই সব হঠকারী ও বিদ‘আতপন্থী দলসমূহের ব্যাপারে সাবধান করে আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন, إِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعاً لَّسْتَ مِنْهُمْ فِيْ شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ- ‘নিশ্চয়ই যারা তাদের দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে ও উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়টি কেবল আল্লাহর উপরে ন্যস্ত। অতঃপর তিনিই তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন’ (আন‘আম ৬/১৫৯)। তারা তাদের দল নিয়েই খুশী থাকে এবং শয়তান তাদেরকে ধোঁকায় ডুবিয়ে রাখে, যাতে তারা সঠিক পথ খুঁজে না পায়। যেমন আল্লাহ বলেন,فَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ زُبُرًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ- فَذَرْهُمْ فِي غَمْرَتِهِمْ حَتَّى حِينٍ- ‘তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহু ভাগে বিভক্ত করেছে। আর প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে খুশী’। ‘অতএব কিছুকাল তাদেরকে তাদের বিভ্রান্তির মধ্যে থাকতে দাও’ (মুমিনূন ২৩/৫৩-৫৪)

উপরে বর্ণিত অজুহাতগুলি মূলতঃ ভুল চিন্তা ও অন্তরের রোগ হ’তে উদ্ভূত। কেননা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে কোন জনপদে কোন সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে সব ছেড়ে উক্ত আন্দোলনে যোগদান করাই হ’ল মানুষের দ্বীনী কর্তব্য। কিন্তু নিকৃষ্ট প্রবৃত্তিপরায়ণতা ও হীন দুনিয়াবী স্বার্থে প্রচলিত প্রথা ও বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে যুগে যুগে নবীদের বিরোধিতা করা হয়েছে। একইভাবে আজও পৃথিবীর যে প্রান্তে সঠিকভাবে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ চলছে, সেখানে বিরোধীরা সর্বশক্তি দিয়ে তাকে বাধাগ্রস্ত ও বিনষ্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিদ‘আতপন্থী ও হঠকারীরা চিরকাল এটি করবে। কিন্তু জান্নাতপিয়াসী মুমিনগণ ঠিকই ছুটে আসবেন এখানে আল্লাহর বিশেষ রহমতে। আল্লাহ আমাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে ‘মুক্তিপ্রাপ্ত দলে’র অন্তর্ভুক্ত করুন- আমীন!



[1]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৮২ ‘ফিতান’ অধ্যায়।