ফিরক্বা নাজিয়াহ

প্রবৃত্তিপরায়ণতাকে কুকুরের বিষের সাথে তুলনার কারণ সমূহ

প্রবৃত্তিপরায়ণতার বিষ মানুষের আক্বীদা ও আমলে যে শিরক ও বিদ‘আত সমূহ সৃষ্টি করে, তাকে অত্র হাদীছে কুকুরের বিষের সঙ্গে তুলনা করার সম্ভাব্য কারণ সমূহ নিম্নরূপ :

এক- কুকুরের বিষ আক্রান্ত ব্যক্তির সারা দেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তার কোন শিরা-উপশিরা বাকী থাকে না। অনুরূপভাবে শিরক ও বিদ‘আত মানুষকে এমনভাবে প্রলুব্ধ করে যে, মানুষ তার প্রতি দ্রুত আকৃষ্ট হয় এবং তা করার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। কারণ এর পিছনে সর্বদা শয়তানের সুঁড়সুড়ি থাকে।

এজন্যই দেখা যায়, অনেক নিরীহ গরীব মুসলমান ফরয ছালাত ও ছিয়াম পালন করে না। কিন্তু একমাত্র সম্বল গাছটি বিক্রি করে হ’লেও বছর শেষে পীরের কবরে বার্ষিক ওরসে নযর-নেয়ায নিয়ে হাযির হবে। অথবা বাড়ীতে একবার মৌলভী ডেকে এনে মীলাদ অনুষ্ঠান করে। শা‘বান মাসে অন্য কোন ছিয়াম পালন না করলেও এমনকি রামাযানের ফরয ছিয়াম বাদ গেলেও শবেবরাতের ছিয়াম ও ছালাত সে আদায় করবে এবং হালুয়া-রুটি খাবে যেকোনভাবেই হৌক।

দুই- কুকুরের বিষদুষ্ট ব্যক্তি ‘পানি আতংক’ রোগে আক্রান্ত হয়। সে পানি পান করতে গেলেই তাতে কুকুর দেখে ও গলায় কাঁটা বিঁধে। ফলে এক সময় সে পানি বিহনে মারা যায়। অনুরূপভাবে বিদ‘আতী তার বিদ‘আতের মধ্যেই জান্নাত তালাশ করে। অথচ তার ফল হয় শূন্য। তাকে অবশেষে জাহান্নামী হতে হয়।

তিন- কুকুরের বিষ যেমন দেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, বিদ‘আতীর যুক্তিবাদ  তেমনি মানুষকে দ্রুত বিভ্রান্ত করে। কিছু না পারলেও তাকে অন্ততঃ সন্দেহের মধ্যে নিক্ষেপ করে। ফলে সে বিদ‘আতে লিপ্ত না হ’লেও অনেক সময় ফরয পালন করা থেকে পিছিয়ে আসে। যেমন অনেক বিদ‘আতী বলেন, কল্ব ছাফ হওয়াটাই বড় কথা। অতএব যিকিরের মাধ্যমে কল্বকে তাযা রাখাটাই মূল কাজ। ছালাত-ছিয়াম এগুলি বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এই যুক্তিবাদের ফল দাঁড়িয়েছে এই যে, অনেক মুসলমানের কাছে ছালাত ও ছিয়াম এখন ঐচ্ছিক বা লোক দেখানো বিষয়ে পরিণত হয়েছে। চাকুরী জীবনে তারা তাদের বস্কে যতটা ভয় করে, আল্লাহকে তার দশ ভাগের একভাগও ভয় করে কি-না সন্দেহ। ফলে দেখা যায় অধিকাংশ নিয়মিত মুছল্লী অফিসে বা ডিউটিতে থাকাকালে বস-এর ভয়ে ছালাত আদায় করেন না। কারণ তাদের কলব ছাফ আছে।

চার- কুকুর যেমন হেদায়াত হয় না। বিদ‘আতী তেমনি হেদায়াত পায় না। কেননা সে মনে করে যে, সে নেকীর কাজ করছে। এদের সম্পর্কেই আল্লাহ বলেন, قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالاً- الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا- ‘তুমি বল, আমি কি তোমাদের নিকট ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের বিষয়ে খবর দিব’? ‘দুনিয়াবী জীবনে যাদের আমল বরবাদ হয়েছে। অথচ তারা ধারণা করে যে, তারা সৎকর্ম করছে’ (কাহফ ১৮/১০৩-১০৪)। অতএব চোর-গুন্ডাদের তওবা করে ভাল হবার সম্ভাবনা থাকলেও বিদ‘আতীর সে সুযোগ হয় না বললেই চলে নিতান্ত আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া।

পাঁচ- আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বিদ‘আতকে অন্য কিছুর সাথে তুলনা না করে কুকুরের বিষের সাথে তুলনা করার মাধ্যমে বিদ‘আতীদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। ক্বিয়ামতের দিন হাউয কাওছারের পেয়ালা তিনি এদেরকে দিবেন না। বরং ঘৃণাভরে বলবেন, سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيَّرَ بَعْدِى  ‘দূর হও দূর হও যারা আমার পরে আমার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছ’।[1] সেকারণ সালাফে ছালেহীন বিদ্বানগণ বিদ‘আতীদের সাথে উঠা-বসা, সালাম-কালাম, খানা-পিনা ইত্যাদি হ’তে বিরত থাকতেন ও সকলকে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। কারণ এরা যেমন ইসলামকে বিকৃত করে, তেমনি মুসলিম ঐক্যকে ভেঙ্গে টুকরা-টুকরা করে। আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন- আমীন!


[1]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৭১ ‘হাউয ও শাফা‘আত’ অনুচ্ছেদ।