ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ

উপসংহার

পরিশেষে বলব যে, ইসলাম বিরোধী যাবতীয় মতবাদ, যেসবের অনুসরণ মানুষ করে থাকে ও যেসব মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ তাদের জানমাল ব্যয় করছে, তা সবই ‘জাহেলিয়াত’ এবং ভ্রষ্টতার উৎস। একইভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জাহেলী তরীকা বেছে নেওয়াটাও চরম ভ্রষ্টতা। নিঃসন্দেহে ইসলামী তরীকাতেই ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে, ত্বাগূতী তরীকায় নয়। যিনি ত্বাগূতকে প্রত্যাখ্যান করবেন ও তাওহীদ প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করবেন, তিনি আল্লাহর সাহায্য পাবেন ও আখেরাতে মুক্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ।

এক্ষণে যারা দ্বীনী বিষয়ে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে এবং দুনিয়াবী বিষয়ে অন্য কাউকে অনুসরণীয় মনে করেন, তারা প্রকৃত প্রস্তাবে দুই জন রাসূল কামনা করেন। অথচ শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মধ্যেই রয়েছে আল্লাহভীরু সৎকর্মশীল মানুষের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ (আহযাব ৩৩/২১)। তিনি বিশ্বমানবতার জন্য প্রেরিত একমাত্র ও সর্বশেষ রাসূল (সাবা ৩৪/২৮)। তাঁর পরে আর কোন নবী নেই। তিনিই শেষনবী (আহযাব ৩৩/৪০)[1] তিনি জীবনের সর্বক্ষেত্রে এক আল্লাহর বিধান মেনেছেন এবং সকলকে তা মানতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন (ইউনুস ১০/১৫)। অথচ বহু ঈশ্বরবাদীদের মত আমরা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে সর্বোচ্চ আসনে বসিয়ে শর্তহীন আনুগত্য পোষণ করে চলেছি ও তার পিছনে জানমাল উৎসর্গ করছি। এ বিষয়ে কুরআনের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা হ’ল-

وَقَالَ اللهُ لاَ تَتَّخِذُوْا إِلـهَيْنِ اثْنَيْنِ إِنَّمَا هُوَ إِلهٌ وَاحِدٌ فَإيَّايَ فَارْهَبُوْنِ-

‘আল্লাহ বললেন, তোমরা দুইজন ইলাহ গ্রহণ করো না। নিশ্চয়ই ইলাহ মাত্র একজন। অতএব তোমরা আমাকেই মাত্র ভয় কর’ (নাহল ১৬/৫১)। তিনি বলেন, مَا جَعَلَ اللهُ لِرَجُلٍ مِنْ قَلْبَيْنِ فِي جَوْفِهِ ‘আল্লাহ কোন মানুষের জন্য তার বুকের মধ্যে দু’টি হৃদয় সৃষ্টি করেননি’... (আহযাব ৩৩/৪)। অতএব জীবনের কোন ক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্য কোন ক্ষেত্রে শয়তানের আনুগত্য, দু’টি একসঙ্গে চলতে পারে না।

অতএব স্ব স্ব আক্বীদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনা থেকে জাহেলী মতবাদসমূহের জঞ্জাল ছাফ না করে স্রেফ ছালাত-ছিয়াম কোন মুসলমানকে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারবে না। তাই পরিচ্ছন্ন ইসলামী আক্বীদা সবার আগে প্রয়োজন। সুতরাং একজন সত্যিকারের মুমিন ইসলামকে অপূর্ণ ও বিকলাঙ্গ না ভেবে বরং পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসাবেই বিশ্বাস করবেন। তিনি ধর্মীয় জীবনে তো বটেই, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক তথা বৈষয়িক জীবনের সর্বত্র ইসলামের দেওয়া মূলনীতি এবং হুদূদ তথা সীমারেখা মেনে চলবেন। আর এভাবেই তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের কুফরী আক্বীদা থেকে মুক্ত হয়ে নিজের সার্বিক জীবনে ইসলামী বিধান কায়েমে সচেষ্ট হবেন।

অনুরূপভাবে একজন মুমিন অবশ্যই দ্বীন ও দুনিয়াকে একত্রে গুলিয়ে ফেলবেন না। বরং দুনিয়াকে দুনিয়া গণ্য করেই তাকে দ্বীনের রংয়ে রঞ্জিত করবেন। তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নবীদের তরীকার বাইরে যাবেন না। দ্বীনের ব্যাপারে কোন ‘রায়’ ও যুক্তিবাদকে অগ্রাধিকার দিবেন না। তিনি আক্বীদা ও বিধানগত ব্যাখ্যায় কখনই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত নীতি ও সালাফে ছালেহীনের তরীকা পরিত্যাগ করবেন না। এভাবেই তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হবেন ও জান্নাত লাভে ধন্য হবেন ইনশাআল্লাহ।


[1]. বুখারী হা/৩৫৩৫; মুসলিম হা/৫২৩, ২২৮৬; মিশকাত হা/৫৭৪৫, ৫৭৪৭, ৫৭৪৮ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়।