ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ

সংঘর্ষের প্রধান দিকসমূহ

পৃথিবীতে মানুষের জন্য আল্লাহর মনোনীত সর্বশেষ দ্বীন হ’ল ‘ইসলাম’ এবং ইসলামই বর্তমান পৃথিবীতে একমাত্র এলাহী ধর্ম। যা মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগে হেদায়াতের সর্বোত্তম আলোকবর্তিকা স্বরূপ। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ফলে কথিত অন্যান্য ধর্মের সাথে ইসলামকে তুলনা করা বাতুলতা মাত্র। অতএব প্রচলিত খ্রিষ্টান ধর্মের অপূর্ণতা ও তাদের ধর্মযাজকদের বাড়াবাড়ির প্রতিবাদে সৃষ্ট ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ মতবাদ ইসলামের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা মারাত্মক অন্যায়। বরং এটাই বাস্তব যে, কথিত অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলিতে মুসলমানেরাই সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত এবং ইসলামই তাদের প্রধান টার্গেট।[1] নিম্নে ইসলামের সাথে প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সংঘর্ষের প্রধান দিকসমূহ উল্লেখ করা হ’ল।-

(১) ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। মানুষের আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক সকল বিষয়ের হেদায়াত এতে মওজুদ রয়েছে। পক্ষান্তরে ধর্মনিরপেক্ষতার মতে ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার। অতএব আধ্যাত্মিক বিষয়ের বাইরে বৈষয়িক ও সামাজিক ব্যাপারে ধর্মের কোন আবশ্যকতা নেই।

(২) ইসলামের মতে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হলেন আল্লাহ। আইন ও বিধানদাতাও তিনি। পার্লামেন্টের সদস্যগণ সেই আইনের বাস্তবায়ন করবেন মাত্র। প্রয়োজনে উক্ত আইনের অনুকূলে আরও বিধান রচনা করবেন। কিন্তু আল্লাহর আইনের প্রতিকূলে কোন আইন রচনার অধিকার তাদের নেই। আর করলেও ‘আমীর’ বা প্রেসিডেন্ট তাতে ভেটো দিতে বাধ্য থাকবেন।

পক্ষান্তরে ধর্মনিরপেক্ষতার মতে জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস। পার্লামেন্টে জনগণের নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই সেই সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে। তারাই তাদের খেয়াল-খুশীমত আইন ও বিধান রচনা করবে। এখানে আল্লাহর আইনের প্রবেশাধিকার নেই। ফলে জাতীয় সংসদের কোন সিদ্ধান্ত আল্লাহর আইনের বিরোধী হলেও সেটা তাদের দৃষ্টিতে কোন অন্যায় নয়। কেননা এগুলো বৈষয়িক ব্যাপার। তাতে প্রেসিডেন্টের ভেটো দেওয়ারও এখতিয়ার নেই। কেননা সার্বভৌমত্বের মালিক জনগণ। অতএব জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশের রায় এখানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে, আল্লাহর আইন নয়।

(৩) ইসলামের মতে ন্যায়-অন্যায়ের মানদন্ড হ’ল আল্লাহর ‘অহি’। ধর্মনিরপেক্ষতার মতে ঐ মাপকাঠি হ’ল মানুষের জ্ঞান। দল বা দলীয় নেতার সিদ্ধান্ত, General Will -এর নামে Party Will বা জাতীয় সংসদের সিদ্ধান্ত কিংবা আদালতের রায়ই সেখানে চূড়ান্ত সত্যের মাপকাঠি।

(৪) ধর্মনিরপেক্ষতার প্রধান লক্ষ্য হ’ল মানব জীবন থেকে ধর্মকে নির্বাসন দেওয়া। পক্ষান্তরে ইসলামের প্রধান লক্ষ্য হ’ল মানব জীবনকে ইসলামের বিধান মোতাবেক গড়ে তোলা।

(৫) ধর্মনিরপেক্ষতা মানুষের জীবনকে বিভক্ত মনে করে। পক্ষান্তরে ইসলাম মানব জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগকে পৃথক মনে করলেও তাকে জীবনের অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ মনে করে।


[1]. এ বিষয়ে পাঠ করুন, ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ প্রকাশিত মাননীয় লেখকের ‘উদাত্ত আহবান’ বই। -প্রকাশক