দাওয়াত ও জিহাদ

طريق النجاة ، الدعوة والجهاد 

মুক্তির একই পথ

দাওয়াত ও জিহাদ

বন্ধুগণ!

১৯৮০ সালের ৫ ও ৬ই এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র ১ম ঐতিহাসিক জাতীয় সম্মেলন ও ইসলামী সেমিনারে আমাদের পঠিত ‘তাওহীদের শিক্ষা ও আজকের সমাজ’ শীর্ষক নিবন্ধে আমরা সার্বিক জীবনে তাওহীদের শিক্ষা গ্রহণ ও অনুশীলনের জন্য আপনাদের প্রতি আহবান জানিয়েছিলাম। আজকের এ বাধা সংকুল পরিবেশে আমরা আপনাদেরকে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য চূড়ান্ত জিহাদের পথ বেছে নেওয়ার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি দাওয়াত ও জিহাদ ব্যতীত তাওহীদ প্রতিষ্ঠা ও জাহান্নাম হ’তে মুক্তির আর কোন পথ মুমিনের জন্য খোলা নেই। আর এই জিহাদ অর্থ কোন অবস্থাতেই বাতিলের সঙ্গে আপোষ না করা। নিরন্তর দাওয়াত ও তাবলীগের মাধ্যমে মানুষকে তাওহীদ বুঝাতে হবে ও সাথে সাথে সমাজ সংস্কারের নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নূহ (আঃ)-এর প্রায় সাড়ে নয়শত বছরের দিন-রাতের অবিরাম প্রচেষ্টার কথা মনে রাখতে হবে। নূহ (আঃ) হ’তে মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত সকল যুগের আম্বিয়ায়ে কেরাম মূলতঃ আল্লাহর পথের দাঈ বা আহবানকারী ছিলেন। তাঁদের স্ব স্ব যুগের প্রচলিত জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে তাঁরা সর্বদা মানুষকে ইলাহী হেদায়াতের পথ দেখিয়েছেন। বিনিময়ে তাঁরা সমাজে ধিকৃত ও নিগৃহীত হয়েছেন। মেজরিটির (Majority) সমর্থন হারিয়েছেন। সমাজ বিরোধী, ধর্মবিরোধী, ঐক্য বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছেন। জন্মভূমি হ’তে বিতাড়িত হয়েছেন। মান-সম্মান, জীবন ও সম্পদ হারিয়েছেন। এমনকি চির বিশ্বাসী ‘আল-আমীন’ মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত ‘কায্যাব’ মহা মিথ্যাবাদী বলে অভিহিত হয়েছেন। তথাপি হক-এর দাওয়াত হ’তে তিনি এক চুল বিচ্যুত হননি। আমাদেরকেও এ নশ্বর জীবনের প্রতিটি নিঃশ্বাস হক্ব-এর দাওয়াতে ব্যয় করতে হবে। সকল দুনিয়াবী প্রলোভন ও স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ার আহবান জানিয়ে যেতে হবে। এজন্য সকল কষ্ট ও মুছীবতকে হাসিমুখে বরণ করে নিতে হবে। দুনিয়াবী সুখ-শান্তির চাইতে জান্নাতের সুখ-শান্তি অনেক বড়। আমাদের জীবনের মালিক যেমন আমরা নই, আমাদের মালের মালিকও তেমনি আমরা নই। বরং আসমানেই আমাদের হায়াত-মউত ও রিযিক নির্ধারিত হয়ে থাকে। আল্লাহর দেওয়া জান ও মাল আল্লাহর পথেই ব্যয় করতে হবে, শয়তানের পথে নয়। জান্নাতের বিনিময়ে তিনি মুমিনের জান ও মাল খরিদ করে নিয়েছেন। আমরা তার খরিদা গোলাম মাত্র। তাই গোলামের কোন অধিকার নেই মালিকের বিরুদ্ধে কাজ করার বা মালিকের সম্পদ নিজের খেয়াল-খুশী মত ব্যয় করার। যদি করি তাহ’লে জাহান্নামের  মর্মান্তিক শাস্তি বরণ করার জন্য প্রস্ত্তত থাকতে হবে। আল্লাহ চান বান্দা সর্বদা তাঁর পথে মানুষকে ডাকুক। যেমন তিনি তাঁর শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে বলেন, وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ وَلاَ تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ، (القصص 87)- ‘আপনি ডাকুন আপনার রব-এর দিকে এবং অবশ্যই অবশ্যই আপনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না’ (ক্বাছাছ ২৮/৮৭)। অন্যত্র তিনি বলেন,

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ ، إِنَّ اللهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ، (المائدة 67)-

‘হে রাসূল! আপনি পৌঁছে দিন যা আপনার প্রতি নাযিল করা হয়েছে আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে। যদি পৌঁছে না দেন, তাহ’লে আপনি তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব পালন করলেন না। আল্লাহ আপনাকে লোকদের অনিষ্টকারিতা হ’তে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফির গোষ্ঠীকে সৎপথ প্রদর্শন করবেন না’ (মায়েদাহ ৫/৬৭)। কি সাংঘাতিক ধম্কি। এখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নেই। তাঁর উম্মত হিসাবে আমাদেরকেই সে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। অতঃপর দাওয়াতের তিনটি স্তর সম্পর্কে এক্ষণে আমরা আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।