আক্বীদায়ে মোহাম্মাদী বা মাযহাবে আহলেহাদীছ

আক্বীদায়ে মোহাম্মাদী

বা

মাযহাবে আহলেহাদীছ

আক্বীদা বিষয়ে :

মোহাম্মাদী বা আহলেহাদীছগণের আক্বীদা বা ধর্মবিশ্বাস হইল ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এই কালেমায়ে শাহাদাত মানুষ যতক্ষণ না বলিবে, ততক্ষণ সে মুসলমান হইবে না। পবিত্রতাময় আল্লাহ স্বীয় যাত ও ছেফাতে একেবারেই একক ও অতুলনীয়। তিনি চিরদিন আছেন ও থাকিবেন। তিনি সকলেরই স্রষ্টা, প্রভু, প্রতিপালক ও রুযীদাতা। তিনি সপ্ত আকাশের উপরে স্বীয় আরশের উপর সমাসীন। পবিত্র কুরআনে ও ছহীহ হাদীছে যেখানে যেভাবে তাঁহার ছেফাত বা গুণাবলী বর্ণিত হইয়াছে, তাহা ক্ষুণ্ণ অথবা রঞ্জিত না করিয়া, ঠিক সেই ভাবেই তাহার উপর আহলেহাদীছগণ ঈমান রাখেন। আর্থিক এবাদত হউক বা শারীরিক, মৌখিক হউক বা মানসিক, সকল প্রকারের এবাদত সেই পবিত্র একক যাত পাকের জন্যই হওয়া উচিৎ। সেই আল্লাহ ব্যতীত অন্যের এবাদত করিলে বা অন্যের মধ্যে এলাহী ছেফাত স্বীকার করিলে মোশরেক হইতে হয়, আর মোশরেক চির জাহান্নামী। আল্লাহ পাকের পবিত্র কুরআন গায়ের মাখলূক- ‘সৃষ্ট নহে’ যাহা তিনি বিশ্বস্ত ফেরেশতা হযরত জিবরাঈলের মধ্যবর্তিতায় শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করিয়াছেন। তিনি আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও সত্য রাসূল। তিনি জিন ও ইনসান সকলের জন্য রাসূল হইয়া আসিয়াছেন। উক্ত রেসালাত বা নবুঅত আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) হইতে শুরু হইয়া মুহাম্মদ (ছাঃ)-এর উপর সমাপ্ত হইয়াছে। হযরতের পরে কেয়ামত পর্যন্ত আর কোন পয়গম্বর বা নবী হইবেন না। হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে শেষ পয়গম্বর বলিয়া স্বীকার না করিয়া, তাঁহার পরে অন্য কাহাকেও নবী বলিয়া স্বীকার করিলে কাফের হইতে হয়, আহলেহাদীছগণ ইহা দৃঢ়তার সহিত বিশ্বাস করেন। হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) সমগ্র আদম সন্তান হইতে উত্তম এবং সমস্ত পয়গম্বর হইতে শ্রেষ্ঠ ও তাঁহাদের সরদার। তাঁহার শাফা‘আত সত্য। শেষ বিচারের দিনে সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ শাফা‘আত তাঁহারই হইবে। তাঁহার সম্বন্ধে কোন প্রকার বে-আদবী, অসভ্যাচরণ, কটুক্তি, গালি-গালাজ ও লা‘ন-তা‘ন করিলে ধর্মদ্রোহী বা কাফের হইতে হয়, ইহাও তাহারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। কোন মানুষ বা উম্মতের কোন ব্যক্তি যতই আবেদ, যতই সাধক, যতই সংসার বিরাগী আর যত বড়ই আলেম বা ফকীহ হউন না কেন, নবুঅত বা পয়গম্বরীর মর্যাদা পাইতে পারেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত মানব অন্তরে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি জগতের সমস্ত বস্ত্তর মহববত হইতে রাসূল (ছাঃ)-এর মহববত অধিক পরিমাণে না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সে প্রকৃত ঈমানদার হইতে পারে না। রাসূলে আক্বদাস (ছাঃ)-কে শুধু মহাগুরু বা পরম শ্রদ্ধেয় বা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাতুল্য ভক্তি-শ্রদ্ধা করিলেই যথেষ্ট হইল, ইহা তাহারা কদাচ স্বীকার করেন না। তাঁহার মু‘জেযা স্বরূপ চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়া, পর্বতমালা, বৃক্ষরাজি, বন্য জন্তু ইত্যাদি কর্তৃক তাঁহার নবুঅতের সাক্ষ্যদান করা, সমস্তই বরহক। রাসূলে আক্বদাস (ছাঃ)-কে আল্লাহ একই রাত্রিতে সশরীরে জাগ্রতাবস্থায় পবিত্র মক্কা হইতে বায়তুল মুকাদ্দাস, অতঃপর তথা হইতে সপ্ত আকাশ পরিভ্রমণ অন্তে সেই রাত্রিতেই মক্কায় স্বীয় অবস্থান স্থলে পৌঁছাইয়াছিলেন, এ বিশ্বাস তাহাদের রহিয়াছে। রাসূল (ছাঃ)-এর উপর অধিক হারে দরূদ পাঠ করা উচিৎ। যে ব্যক্তি তাঁহার পবিত্র নাম উচ্চারণ করিয়া বা শুনিয়া দরূদ পড়ে না, সে হতভাগ্য বখিল। হাশরের ময়দানে রাসূল (ছাঃ) সর্বাগ্রে উঠিবেন এবং সকলের পূর্বে তাঁহার জন্যই বেহেশতের দ্বার উন্মুক্ত করা হইবে। মহা সম্মানিত ‘হাউয কাওছার’ তাঁহাকেই দেওয়া হইবে। তাঁহার আদেশ ও আচরণ তাঁহার উম্মতের জন্য একান্তই পালনীয়। আল্লাহর পক্ষ হইতে অহী না আসা পর্যন্ত রাসূল (ছাঃ) শরী‘আতের কোন আদেশ প্রদান করিতেন না। তিনি শারঈ ভুল-ভ্রান্তি হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত এবং সকল পাপ হইতে নিষ্কলঙ্ক ছিলেন। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে অমান্য বা অস্বীকার করিলে কাফের হইতে হয়।

শরী‘আতে সন্দেহহীন ও অকাট্য দলীল কেবল পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ। শ্রদ্ধেয় ইমাম ও ফকীহগণ ও মহাপ্রাণ মোহাদ্দিছগণের প্রত্যেক আদেশ ও অভিমত, পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুকূলে হইলে তাহা অবশ্যই গ্রহণীয় ও পালনীয়, অন্যথায় নহে। সকল পয়গম্বর (আঃ) ও তাঁহাদের মু‘জেযা ও কেতাব সমস্তই বরহক। পয়গম্বরগণের দেহ মোবারক মাটিতে খায় না, পূর্বাপর সমভাবেই রহিয়া যায়। বেহেশত, দোযখ, আযাব, ছওয়াব, লওহে-মাহফূয, কলম, কেয়ামত, ছূর, মীযান, নামায়ে আমল, ফেরেশতা, হূর ও গেলমান ইত্যাদি সমস্তই বরহক। আহলে বায়েত বা হযরতের পরিবারবর্গের ও ছাহাবায়ে কেরামের প্রতি মহববত ঈমানেরই অন্তর্ভুক্ত। ইহাদের প্রতি বিদ্বেষ ভাব, বিশেষতঃ খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রতি বিদ্বেষ বা হিংসা পোষণ করা কুফরীর লক্ষণ। শ্রদ্ধেয় আউলিয়াগণের কারামত বরহক এবং তাহাদিগকে যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা একান্ত কর্তব্য। কিন্তু তাঁহাদিগকে অভাব মোচনকারী, বিপদহন্তা, রোগ আরোগ্যদাতা, দুঃখ-দৈন্য নিবারণকারী ইত্যাদি বলিয়া আহলেহাদীছগণ কদাচ মনে করেন না বা তাহাদিগকে এমন গুণে  গুণান্বিতও করেন না, যে গুণ বা যে ছেফত তাঁহারা আল্লাহর প্রতি আরোপ করিয়া থাকেন। তাহাদের উদ্দেশ্যে এমন কোন এবাদতও করেন না, যাহা তাহারা আল্লাহর জন্য করিয়া থাকেন। উহা শারীরিক, আর্থিক অথবা বাচনিক যাহাই হউক না কেন।

মহামতি ইমাম, ফকীহ ও মহাপ্রাণ মোহাদ্দেছগণের প্রতি হীনতা আরোপ ও হিংসা পোষণ এবং প্রলাপোক্তি কদাচ কোন মুসলিমের জন্য শোভনীয় নহে। বিশেষতঃ সর্বজনমান্য পরম ভক্তিভাজন ইমাম চতুষ্টয়ের প্রতি শত্রুতা পোষণ, ঘৃণার সহিত তাঁহাদের নাম উচ্চারণ ইত্যাদি নিতান্ত মূর্খতা ও চরম অভদ্রতা বলিয়াই তাঁহারা মনে করেন। আহলেহাদীছগণ ইহাদিগকে ও অন্যান্য বোযর্গদিগকেও অন্তরের  সহিত চিরদিন সম্মান প্রদর্শন ও আন্তরিক শ্রদ্ধা-ভক্তি করিয়া থাকেন। শরী‘আতের যে সমস্ত বিষয় আল্লাহ ও তদীয় রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ হইতে অর্থাৎ কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী তাঁহাদের নিকট পৌঁছিয়াছে, তাহা তাঁহারা সাদরে গ্রহণপূর্বক সনিষ্ঠ পালন করিয়া থাকেন। তবে যাহার যে কথা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিপরীত দৃষ্ট হয়, কেবল সেই কথাটি তাঁহারা স্বীকার করিতে বা মানিয়া লইতে রাযী নহেন। কোন একজন ইমামের শরী‘আত সংক্রান্ত আদেশ কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিপরীত হইলেও নতশিরে মানিয়া লইতে হইবে, এমন আকীদা তাঁহারা কদাচ পোষণ করেন না। বরং এরূপ তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণকে তাঁহারা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিপরীত বলিয়া মনে করিয়া থাকেন। দুনিয়ার মধ্যে এমন কোন মহাজ্ঞানী জন্মগ্রহণ করেন নাই বা করিবেনও না, যাঁহার প্রত্যেকটি কথা নিঃসন্দেহে নিঃসংকোচে বিনা দ্বিধায় ফরয বা ওয়াজেব বলিয়া স্বীকার করা যাইতে পারে, একমাত্র সরওয়ারে কায়েনাত হযরত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যতীত। কেবলমাত্র তাঁহারই পবিত্র আমল অভ্রান্ত, যাহা নিঃসন্দেহে অনুসরণ ও অনুকরণ পূর্বক মানুষ নাজাতের পথ মুক্ত করিতে পারে- আহলেহাদীছগণ এরূপ সুদৃঢ় ‘আকীদা’ পোষণ করিয়া থাকেন। প্রিয় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যতীত এমন কেহই নাই, শরী‘আত সম্বন্ধে যাঁহার ভুল-ভ্রান্তি হয় নাই বা হইতে পারে না। মুহাম্মাদীগণ রাসূল (ছাঃ)-এর মাতৃভূমি পবিত্র মক্কা ও কর্মভূমি পবিত্র মদীনাকে ‘হারাম’ বলিয়া মনে করেন। তাঁহারা খেলাফতকে[1] তাঁহার বংশেই সীমাবদ্ধ মনে করেন।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পর সমগ্র উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম মানুষ প্রথম খলীফা হযরত আবুবকর (রাঃ), তাঁহার পরে দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারূক (রাঃ), তৎপর তৃতীয় খলীফা যুননূরায়েন- হযরত ওছমান (রাঃ), অতঃপর চতুর্থ খলীফা ‘আল্লাহর সিংহ’ হযরত আলী (রাঃ), আহলেহাদীছগণ ইহা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন। আহলে বায়তের শত্রুদিগকে তাঁহারা আল্লাহর শত্রু মনে করেন। ইমাম মাহদী (আঃ)-এর ইমামত তাহারা বরহক মনে করেন। হযরত ঈসা   (আঃ)-কে জীবিত আসমানে উঠানো হইয়াছে এবং অদ্যাবধি জীবিত অবস্থায় আছেন বলিয়া তাহারা বিশ্বাস করেন। তিনি কেয়ামতের প্রাক্কালে আসমান হইতে অবতরণ পূর্বক দাজ্জালকে হত্যা করিয়া দুনিয়াতে ইসলাম বিস্তার করিবেন এবং প্রিয় হযরতের সুন্নতের উপর সভক্তি আমল করিতে থাকিবেন এবং যথা সময় মৃত্যুর কবলে পড়িয়া এন্তেকাল ফরমাইবেন, এ বিশ্বাস তাহাদের আছে। মোতা‘কে তাঁহারা যেনার ন্যায় সকল অবস্থায় হারাম মনে করিয়া থাকেন। মোওয়াহহেদ ও সুন্নত অনুসারী মুসলমানগণ কবীরা গোনাহ বশতঃ চিরদিন জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করিবেন না, বরং রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত ক্রমে কোন না কোন দিন মুক্ত হইয়া বেহেশতে অবশ্যই যাইবেন। মোশরেক ও কাফেরের উপর যে বেহেশত হারাম, এ বিশ্বাস তাঁহারা রাখেন। কবর যেয়ারত করা, মৃত ব্যক্তিদের জন্য দো‘আ করা এবং তাহাদের কথা স্মরণ করিয়া নিজেদের মরণ ও পরিণামকে স্মরণ করা, তাহারা সুন্নত বলিয়া জানেন। তবে কবরের উপর সেজদা করা, কবরস্থ ব্যক্তির নিকটে মনোবাঞ্ছা পূরণার্থে কামনা করা, মানত করা, নযর চড়ানো ও তাওয়াফ করা ইত্যাদি সমস্তই এবাদতের অন্তর্ভুক্ত বলিয়া তাহারা এই সবকে ‘শিরক’ বলিয়া মনে করেন; উক্ত কবরস্থ ব্যক্তি পীর, পয়গম্বর, শহীদ যিনিই হউন না কেন। উপরোক্ত এবাদতগুলি অথবা অন্য যে কোন এবাদত, যাহা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট, তাহা অন্যের জন্য করাকে তাঁহারা শিরক বলিয়া জানেন। ছদকা-খয়রাত অথবা অন্য কোন পুণ্যের কাজ মৃত ব্যক্তির নামে করিলে তিনি তাহা প্রাপ্ত হন, তবে সেই পুণ্যের কাজগুলি সুন্নত অনুযায়ী হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। রাসূল (ছাঃ)-এর গুণাবলী ও আওছাফে হামীদাহ জনসমাজে বর্ণনা করা মহাপুণ্যের কাজ সন্দেহ নাই। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) স্বয়ং উহার নিয়ম-পদ্ধতি যেভাবে শিখাইয়াছেন, ঠিক সেই ভাবেই হওয়া উচিৎ। শরী‘আতের কোন মাসআলা কুরআন বা হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত না হইয়া থাকিলে এজমায়ে ছাহাবার অনুসরণ করা উচিৎ এবং ইহাতে মীমাংসিত না হইয়া থাকিলে যেকোন মোহাদ্দেছ, ফকীহ বা ইমামের সুচিন্তিত অভিমতের উপর তাঁহারা আমল করিয়া থাকেন। কিন্তু সকল ব্যাপারে কেবলমাত্র একজন মোহাদ্দেছ বা মোজতাহেদ বা ইমামেরই অনুসরণ করিতে হইবে, এমন আকীদা তাঁহারা কদাচ পোষণ করেন না। বরং যে মোহাদ্দেছ বা মোজতাহেদ বা ইমামের কথা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অধিকতর নিকটবর্তী, তাঁহার কথার উপরেই তাহারা আমল করেন। আবার উক্ত মাসআলা কুরআন বা হাদীছ হইতে যখনই পাওয়া যায়, তখনই তাহারা উক্ত ইমামের কথা পরিহার করেন। কুরআন বা হাদীছ মওজুদ থাকিতে কোন রায় বা কেয়াসের উপর আমল করা অথবা কুরআন ও হাদীছের খেলাফ কোন মাসআলার উপর অাঁকড়ে থাকা তাহারা অন্যায় বলিয়া মনে করেন। তাহারা নিজেদের রায় বা কেয়াসের উপর আমল করার চাইতে সালাফে ছালেহীনের অনুসরণ করাই উত্তম মনে করেন।

যে সমস্ত কেতাবে বিনা সনদে বা প্রমাণহীন অবস্থায় শরী‘আতের কথা বর্ণিত হইয়াছে, ইহা তাহারা বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন না। তাহারা শুধু ছেহাহ সেত্তার হাদীছগুলিই আমলের যোগ্য মনে করেন না বরং ঐ সমস্ত হাদীছগুলিকেও আমলের যোগ্য মনে করেন, যাহা মোহাদ্দেছগণের নিকটে ‘ছহীহ’ বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে। আকীদা, কওল ও ফে‘ল-এর সমষ্টিকে তাহারা ‘ঈমান’ বলিয়া থাকেন। তাহাদের মতে ঈমান কম ও বেশী হইতে পারে। তাহারা সঊদী আরবের শায়খ মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহহাব নাজদী ছাহেবের কদাচ মোক্বাল্লেদ নহেন। এমনিভাবে দিল্লীর মিয়াঁ ছাহেব বা ভূপালের নওয়াব ছাহেব অথবা অন্য কোন জীবিত বা মৃত বিদ্বানের তাহারা কদাচ মোক্বাল্লেদ নহেন। তাহারা মদীনা শরীফের যেয়ারত করিয়া থাকেন এবং মসজিদে নববীর এক রাক‘আত ছালাতকে অন্য স্থানের হাযার রাক‘আত ছালাতের তুল্য মনে করিয়া থাকেন। তাহারা প্রত্যেক সৎ-অসৎ মুসলমানের পশ্চাতে ছালাত আদায় করা এবং তাহাদের জানাযায় যোগদান করা জায়েয মনে করেন।

ইসলামের আরকান পাঁচটি- আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের প্রতি ঈমান আনা, দিবারাত্রি পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা, রামাযান মাসের ছিয়াম রাখা, মাল থাকিলে যথারীতি যাকাত আদায় করা, সামর্থ্য থাকিলে জীবনে একবার হজ্জ করা। তাহাদের মাযহাব ইসলাম, তাহারা মুসলিম বা মুসলমান। জগতের কোন মানুষের দিকে তাহারা মনসূব না হইয়া সরওয়ারে দোজাহান হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ছাঃ)-এর দিকে মনসূব হইয়া নিজদিগকে ‘মুহাম্মাদী’ বলিয়া থাকেন। কাহারো কাজের বা মতের পয়রবী বা অনুসরণের দিক দিয়া যেহেতু তাহারা কেবল কুরআন ও হাদীছকেই নিঃসন্দেহে অনুসরণের যোগ্য মনে করিয়া থাকেন এবং কুরআনকেও যেহেতু কুরআনের বহু স্থানে ‘হাদীছ’ বলা হইয়াছে, সে কারণ তাহারা নিজদিগকে আহলেহাদীছও বলিয়া থাকেন, ইহাই হইতেছে তাহাদের আকীদাগত সংক্ষিপ্ত পরিচয়।


[1]. এর দ্বারা খিলাফতে রাশেদাহ-ক ে বুঝানো হয়েছে। -প্রকাশক।