আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন?

হানাফী মাযহাবের বিস্তৃতির কারণ (سبب ظهور المذهب الحنفي)

হানাফী মাযহাব সর্বত্র দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক। খলীফা মাহ্দী, হাদী ও হারূনুর রশীদের আমলে (১৫৮-১৯৩ হিঃ) ইমাম আবু হানীফার প্রধান শিষ্য আবু ইউসুফ (১১৩-১৮২ হিঃ) দেশের প্রধান বিচারপতি থাকার সুবাদে ইরাক, ইরান ও মধ্য তুর্কিস্তান সহ খেলাফতের সর্বত্র হানাফী মাযহাবের ফাতাওয়া ও সিদ্ধান্তসমূহ প্রচার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) এদিকে ইঙ্গিত করে বলেন, فَكَانَ سَبَبًا لِظُهُوْرِ مَذْهَبِهِ  ‘এটাই ছিল তাঁর মাযহাব সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ’।[1] আব্দুল হাই লাক্ষ্মৌবী (১২৬৪-১৩০৪/১৮৪৮-৮৬) একথা সমর্থন করে বলেন, هُوَ اَوَّلُ مَنْ نَشَرَ عِلْمَ أَبِىْ حَنِيْفَةَ فِىْ أَقْطَارِ الْأَرْضِ وَ ثَبَتَ الْمَسَائِلَ ‘তিনিই প্রথম আবু হানীফার ইল্ম পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেন ও তাঁর মাসআলাসমূহ প্রতিষ্ঠিত করেন’।[2]

দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ইসলাম এসেছিল রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও খলীফাদের আমলেই আরব বণিক ও মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরামের মাধ্যমে। বিভিন্ন মাযহাব সৃষ্টির পূর্বে আগত সেই ইসলাম ছিল হাদীছ ভিত্তিক নির্ভেজাল ইসলাম। নিঃসন্দেহে তাঁরা ছিলেন ‘আহলেহাদীছ’। পরবর্তী হানাফী মতাবলম্বী সেনাপতি ইখতিয়ারুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজী কর্তৃক ৬০২ হিজরী মোতাবেক ১২০১ খৃষ্টাব্দের সামরিক বিজয় ও তাঁর সাথে ও পরে আগত তুর্কী হানাফী আলেম ও মারেফতী ফকীরদের মাধ্যমে প্রচারিত হানাফী ও মারেফতী ইসলাম প্রধানতঃ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় এদেশে প্রসার লাভ করে। যার অধিকাংশ আমল ছিল শিরক ও বিদ‘আতে ভরা। যদিও সেনারগাঁয়ের মুহাদ্দিছ শারফুদ্দীন আবু তাওয়ামা (মৃঃ ৭০০ হিঃ/১৩০০খৃঃ) ও তার শিষ্যদের প্রচেষ্টায় আহলেহাদীছ আন্দোলন চালু থাকে। উল্লেখ্য যে, বোখারা (রাশিয়া) থেকে আগত এই স্বনামধন্য মুহাদ্দিছ-এর মাধ্যমেই উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশেই সর্বপ্রথম বুখারী ও মুসলিমের দরস চালু হয়। তিনি সোনারগাঁয়ে দীর্ঘ ২২ বছর যাবৎ ছহীহায়েন-এর দরস দিয়েছিলেন। বলা চলে যে, প্রধানতঃ তাঁরই প্রচেষ্টায় এদেশে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সর্বাধিক প্রসার লাভ করে। পরবর্তীতে তুর্কী, মোগল, শী‘আ, পাঠান, আফগান প্রভৃতি দলের হাত বদল হয়ে যে ইসলাম এদেশে স্থিতি লাভ করে, তা হয়ে পড়ে শিরক, বিদ‘আত ও বিভিন্ন কুসংস্কারে ভরা জগাখিচুড়ী ইসলাম। বলা বাহুল্য যে, আজও সে অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি।



[1]. শাহ অলিউল্লাহ, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ১/১৪৬ ‘ফক্বীহদের মাযহাবী পার্থক্যের কারণ সমূহ’ অনুচ্ছেদ।

[2]. মুক্বাদ্দামা শারহু বেক্বায়াহ (দেউবন্দ ছাপা: তাবি) পৃঃ ৩৮।