সূদ

সূদের প্রকারভেদ

ইসলামী শরী‘আহ অনুসারে রিবা দুই ধরনের (ক) রিবা আন-নাসিআহ (الربوا النسيئة) ও (খ) রিবা আল-ফাযল (الربوا الفضل)

(ক) রিবা আন-নাসিআহ হ’ল বাকীতে ঋণের সূদ। অর্থাৎ ঋণের সেই মেয়াদকালকে বলা হয়, যা ঋণদাতা মূল ঋণের উপর নির্ধারিত পরিমাণ অতিরিক্ত প্রদানের শর্তে  ঋণগ্রহীতাকে  নির্ধারণ  করে দেয়।  উদাহরণস্বরূপ, ক এক বছরের জন্য খ-কে টাঃ ১০০/= দিল এই শর্তে যে, সে তাকে টাঃ ১০০/= এর সাথে অতিরিক্ত আরও ১০/= যোগ করে ফেরৎ দিবে। এই অতিরিক্ত টাঃ ১০/= ই হ’ল ‘রিবা আন-নাসিআহ’ বা প্রতীক্ষার সূদ।

(খ) রিবা আল-ফাযলের উদ্ভব হয় পণ্যসামগ্রী হাতে হাতে বিনিময়ের সময়ে। একই জাতীয় পণ্যের কম পরিমাণের সাথে বেশী পরিমাণ পণ্য হাতে হাতে বিনিময় করা হ’লে পণ্যটির অতিরিক্ত পরিমাণকে বলা হয় রিবা আল-ফাযল। ‘ফাযল’ অর্থ অতিরিক্ত।

প্রখ্যাত ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একদা বিলাল (রাঃ) রাসূলে করীম (ছাঃ)-এর সমীপে কিছু উন্নত মানের খেজুর নিয়ে হাযির হ’লেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথা থেকে এ খেজুর আনলে? বিলাল (রাঃ) উত্তর দিলেন, আমাদের খেজুর নিকৃষ্টমানের ছিল। আমি তার দুই ছা‘-এর বিনিময়ে এক ছা‘ উন্নতমানের ‘বারমী’ খেজুর বদলিয়ে নিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, أَوَّهْ عَيْنُ الرِّبَا عَيْنُ الرِّبَا لاَ تَفْعَلْ وَلَكِنْ إِذَا أَرَدْتَ أَنْ تَشْتَرِىَ فَبِعِ التَّمَرَ بِبَيْعٍ آخَرَ ثُمَّ اشْتَرِ بِهِ،  ‘ওহ! এতো নির্ভেজাল সূদ, এতো নির্ভেজাল সূদ। কখনো এরূপ করো না। তোমরা যদি উত্তম খেজুর পেতে চাও, তাহ’লে নিজের খেজুর বাজারে বিক্রি করবে, তারপর উন্নতমানের খেজুর কিনে নিবে’।[1]

অন্য এক হাদীছে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) উল্লেখ করেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

اَلذَّهَبُ بَالذَّهَبِ، وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ، وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ، وَالشَّعِيْرُ بِالشَّعِيْرِ، وَالتَّمَرُ بِالتَّمَرِ، وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ، مِثْلاً بِمِثْلٍ، يَدًا بِيَدٍ، فَمَنْ زَادَ أَوِ اسْتَزَادَ فَقَدْ أَرْبَى، اَلْآخِذُ وَالْمُعْطِىْ فِيْهِ سَوَاءٌ،

‘সোনার বিনিময়ে সোনা, রূপার বিনিময়ে রূপা, গমের বিনিময়ে গম, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর, যবের বিনিময়ে যব, লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান এবং উপস্থিত ক্ষেত্রে হাতে হাতে। যে ব্যক্তি বেশী দিয়েছে বা নিয়েছে সে সূদী কারবার করেছে। এক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতা উভয়েই সমান’।[2]

তাই ইসলামে এই ধরনের লেনদেন তথা রিবা নিষিদ্ধ। এর অন্তর্নিহিত কারণ হ’ল, তাৎক্ষণিক স্থানীয় লেনদেনের ক্ষেত্রে উভয়ের পক্ষে সুবিচার ও যথাযথ বিনিময় সম্ভব নাও হ’তে পারে। তাই শরী‘আতের হুকুম হ’ল নির্ধারিত পণ্যটি প্রথমে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হবে।


[1]. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/২৮১৪

[2]. মুসলিম, আল-বানী, মিশকাত হা/২৮০৯; ঐ বঙ্গানুবাদ ৬/১৯ পৃঃ হা/২৬৮৫