ইনসানে কামেল

ইনসানে কামেল-এর কতগুলি দৃষ্টান্ত

(১) খলীফা আবুবকর (রাঃ) খেলাফতের গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। রাসূলের প্রেরিত সেনাবাহিনী তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনে মদীনায় ফিরে এসেছে। এক্ষণে তাদের রাজধানী রক্ষার জন্য মদীনায় রাখা হবে, না পুনরায় প্রেরণ করা হবে, এ নিয়ে শীর্ষস্থানীয় ছাহাবীগণের মধ্যে আলোচনা হ’ল। অধিকাংশের পরামর্শ হ’ল, এ মুহূর্তে রাজধানী মদীনাকে রক্ষা করাই হবে বড় কর্তব্য। তাছাড়া সেনাপতি পরিবর্তন করাও আবশ্যক। কেননা সে হ’ল বয়সে তরুণ এবং গোলামের পুত্র উসামা বিন যায়েদ বিন হারেছাহ (রাঃ)। আনছার ও মুহাজির সেনারা তার নেতৃত্ব মানতে চাইবে না। খলীফা আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বললেন, ‘মদীনাতুন নবীর রক্ষাকর্তা আল্লাহ। যুদ্ধে বিজয় দানের মালিকও আল্লাহ। আর ইসলামে সাদা-কালোর কোন ভেদাভেদ নেই। অতএব মুত্যুর পূর্বে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যার মাথায় পাগড়ী বেঁধে যে উদ্দেশ্যে তাকে রওয়ানা করে দিয়েছিলেন, আমি সে পাগড়ী খুলে নিতে পারব না’। অতঃপর আল্লাহর নামে তিনি সেনাবাহিনীকে খৃষ্টান পরাশক্তির বিরুদ্ধে রওয়ানা হবার নির্দেশ দিলেন এবং যথারীতি তারা বিজয়ী বেশে মদীনায় ফিরে এল। চারিদিকে শত্রু-মিত্র সবার মধ্যে নতুন মাদানী রাষ্ট্র সম্পর্কে শ্রদ্ধার আসন দৃঢ় হ’ল। এভাবে খলীফা হাক্কুল্লাহ ও হাক্কুল ইবাদ কঠোরভাবে রক্ষা করলেন।[1]

(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর যাকাত জমা নিয়ে তাঁর দো‘আ পাবার সুযোগ নেই, সেই অজুহাতে একদল লোক নতুন খলীফার নিকটে যাকাত জমা করতে অস্বীকার করল। শূরার বৈঠক বসল। খলীফা আবুবকর (রাঃ) ওদের বিরুদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করতে চাইলেন। কিন্তু শূরা দ্বিমত পোষণ করল। এমনকি ওমর (রাঃ) বললেন, হে খলীফা! তারা যে কলেমাগো মুসলমান। আপনি কিভাবে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন? খলীফা বলে উঠলেন, আল্লাহর কসম! আমি ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবশ্যই যুদ্ধ করব, যে ব্যক্তি ছালাত ও যাকাতের দু’টি ফরয (একটি হাক্কুল্লাহ অন্যটি হাক্কুল ইবাদ)-এর মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে? আল্লাহর কসম! রাসূলের সময়ে যাকাত হিসাবে জমাকৃত একটি বকরীর দড়িও যদি কেউ আজকে দিতে অস্বীকার করে, আমি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যু্দ্ধ ঘোষণা করব’। ওমর (রাঃ) বলেন, আমি দেখলাম, আবুবকরের বক্ষ যুদ্ধের জন্য প্রসারিত হয়ে গেছে এবং আমি বুঝলাম যে, তিনি হক-এর উপরে আছেন’।[2] এই যুদ্ধের ফলে ভবিষ্যতে আর কেউ কোন ফরয বিধানকে হালকা করে দেখার সাহস পায়নি এবং এভাবে হাক্কুল ইবাদ রক্ষার ফলে ইসলামী রাষ্ট্রের আর্থিক ভিত মযবুত হ’ল। গরীবদের অধিকার রক্ষা পেল।

(৩) খলীফা ওমর (রাঃ) আলেকজান্দ্রিয়া অভিযানে আমর ইবনুল আছ (রাঃ)-কে সেনাপতি করে পাঠালেন। কিন্তু দীর্ঘ তিনমাস অবরোধের পরেও বিজয় সম্ভব হয় না। তখন খলীফা সেনাপতি বরাবর একটি পত্র লিখলেন। সেখানে হাম্দ ও ছালাতের পর তিনি বলেন, ‘সম্ভবতঃ আপনারা সর্বদা যুদ্ধের কলা-কৌশল নির্ধারণে ও পার্থিব লাভালাভ নির্ণয়ে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলেছেন। যেমনভাবে বিরোধীরা নিজেদেরকে লিপ্ত রেখেছে। অথচ খালেছ নিয়ত ছাড়া আল্লাহ কাউকে বিজয় দান করেন না। অতএব আমার এই পত্র পাওয়া মাত্র আপনি মুজাহিদগণকে একত্রিত করুন এবং তাদেরকে খালেছ অন্তরে স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করুন। তাদেরকে জানিয়ে দিন, তারা যেন তাদের প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে স্রেফ ইসলামের প্রচার ও আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে’।

সেনাপতি আমর ইবনুল আছ (রাঃ) সৈন্যদেরকে জমা করে খলীফার চিঠিখানা পড়ে শোনালেন। অতঃপর গোসল ও দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় শেষে আল্লাহর সাহায্য কামনা করে খালেছ অন্তরে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ফলে মূহূর্তের মধ্যে শহর বিজিত হয়ে গেল। এভাবে মুলতঃ তাক্বওয়ার মাধ্যমেই আল্লাহর গায়েবী মদদ লাভ সম্ভব হ’ল। বৈষয়িক সঙ্গতি কম থাকলেও আল্লাহর গায়েবী মদদ সেটিকে পুষিয়ে দিল।[3]

(৪) ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে ১৬ হিজরীতে মুসলিম সৈন্যদল মাদায়েন জয় করেছে। গণীমতের মাল জমা হচ্ছে। এমন সময় এক ব্যক্তি মহামূল্যবান ধন-রত্ন নিয়ে এল। জমাকারী বললেন, এমন মূল্যবান সম্পদ আমরা ইতিপূর্বে দেখিনি। তুমি এ থেকে কিছু রেখে দাওনি তো? লোকটি বলল, والله لولا الله ما آتيتكم به، ‘আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহর ভয় না থাকত, তাহ’লে আমি কখনোই এ সম্পদ আপনাদের কাছে নিয়ে আসতাম না’। সবাই তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, যদি আমি পরিচয় দেই, তাহ’লে আপনারা আমার প্রশংসা করবেন। অথচ আমি কেবল আল্লাহর প্রশংসা করি এবং তাঁর নিকটে ছওয়াব কামনা করি। এরপর তিনি চলে গেলেন। তখন তার পিছনে একজন লোককে পাঠানো হ’ল এবং  জানা গেল যে, তিনি হলেন, আমের বিন আবদে ক্বায়েস।[4]

(৫) ওমর (রাঃ) রাতের অন্ধকারে গোপনে শহর ঘুরছেন। এমন সময় একটি ঘর থেকে গানের শব্দ ভেসে এলো। তারা নিজেদের ঘুম নষ্ট করে হাক্কুন নাফ্স আদায়ে বিরত ছিল। অন্যদিকে শব্দ করার মাধ্যমে অন্যের ঘুম ও শান্তি বিনষ্ট করে হাক্কুল ইবাদ নষ্ট করছিল। তিনি দরজা খটখটালেন। কিন্তু ওরা শুনতে পেল না। ফলে পিছন দরজা দিয়ে তিনি গৃহে প্রবেশ করলেন। লোকেরা ভীতবিহবল হয়ে পড়ল। কিন্তু তারা জানত যে, শরী‘আত বিরোধী কিছু ধরিয়ে দিলে খলীফা ক্রোধান্বিত হবেন না। তাই এক ব্যক্তি সাহস করে বলে উঠল- হে আমীরুল মুমিনীন! আমরা একটা পাপ করেছি। কিন্তু আপনি তিনটি পাপ করেছেন। প্রথমতঃ আপনি বিনা অনুমতিতে গৃহে প্রবেশ করেছেন। অথচ আল্লাহ বলেছেন يَآ أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتاً غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا  ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা বিনা অনুমতিতে বা সালাম না দিয়ে নিজ গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ কর না’ (নূর ২৪/২৭)। দ্বিতীয়তঃ আপনি গোয়েন্দাগিরি করেছেন। অথচ আললাহ বলেছেন, وَلاَ تَجَسَّسُوْا ‘তোমরা কারু ছিদ্রান্বেষণ করো না’ (হুজুরাত ৪৯/১২)। তৃতীয়ত: আপনি ঘরের পিছন দরজা  দিয়ে প্রবেশ করেছেন। অথচ আল্লাহ বলেছেন, وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَنْ تَأْتُوْاْ الْبُيُوتَ مِن ظُهُورِهَا ‘ঘরের পিছন দিয়ে প্রবেশ করার মধ্যে তোমাদের কোন কল্যাণ নেই’ (বাক্বারাহ ২/১৮৯)। খলীফা বললেন, ‘আমি আমার গোনাহ থেকে তওবা করছি। তোমরা তোমাদের গোনাহ থেকে তওবা কর’।[5]

(৬) ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) দু’টি নতুন কাপড় পরে একটু দেরীতে মসজিদে এলেন। অতঃপর জুম‘আর খুৎবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে বসলেন। হযরত সালমান ফারেসী (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের সবাইকে আপনি একটি করে কাপড় বন্টন করেছেন। অথচ আপনার পরনে দু’টি কাপড় দেখছি? ওমর (রাঃ) তার বড় ছেলে আবদুল্লাহর দিকে ইঙ্গিত করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বললেন, ওটি আমার  অংশের কাপড় যা আববাকে দিয়েছি পায়জামা করার জন্য’। ওমরের কাপড়ে সাধারণতঃ ১২/১৪টি করে তালি লাগানো থাকত। নতুন কাপড়টি ছিল রাষ্ট্রীয় বায়তুল মাল থেকে সবার জন্য বন্টিত অংশ মাত্র’।[6]

শাসক ও শাসিতের এই স্বাধীনতার তুলনা কোথাও আছে কি? উভয়ের স্বাধীনতা অহি-র বিধান দ্বারা সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রিত। তাই মনুষ্যত্বের স্বাধীনতা কাম্য, পশুত্বের স্বাধীনতা নয়। আর তা নিশ্চিত হ’তে পারে কেবলমাত্র তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতির মাধ্যমে এবং তার প্রেরিত অহি-র বিধানের অনুসরণে হাক্কুল্লাহ ও হাক্কুল ইবাদ যথার্থভাবে রক্ষা করার মাধ্যমে।

ওমর (রাঃ) থেকে এ ধরনের অনেক ঘটনা প্রসিদ্ধ রয়েছে। যেমন এক খৃষ্টান বৃদ্ধার জিযিয়া কর মওকূফ করা ও তার জন্য নিয়মিত রাষ্ট্রীয় ভাতা নির্ধারণের ঘটনা।[7] প্রসব বেদনায় কাতর এক মহিলাকে রাতের অন্ধকারে স্বীয় স্ত্রীকে সাথে নিয়ে গিয়ে সাহায্য করার ঘটনা।[8] বায়তুল মুক্বাদ্দাস বিজয়ের পর সেখানে গমনকালে স্বীয় গোলামকে উটে বসিয়ে নিজে লাগাম ধরে হাঁটার ঘটনা ইত্যাদি।

(৭) খলীফা ওমর ইবনে আব্দুল আযীয (রাঃ) আড়াই বছর খেলাফতে থাকার পর মাত্র সাড়ে ৩৯ বছর বয়সে বিষ প্রয়োগে শহীদ হন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হ’ল যে, তিনি  দুটি বন্ধ ঘরে সোনা-দানা ভর্তি করে রেখে গিয়েছেন, যার সবই রাষ্ট্রীয় বায়তুল মাল থেকে তিনি আত্মসাৎ করেছেন। পরবর্তী খলীফা ইয়াযীদ বিন আব্দুল মালেক অভিযোগকারীকে সাথে নিয়ে ওমরের বাড়ীতে গিয়ে উক্ত কক্ষ দু’টি খুললেন। দেখা গেল সেখানে আছে কেবল একটি চামড়ার  চেয়ার, একটি পিতলের বদনা, ৪টি পানির কলসী। অন্য ঘরে  আছে একটি খেজুর পাতার চাটাই যা মুছাল্লা হিসাবে রাখা হয়েছে। আর আছে ছাদের সঙ্গে ঝুলানো একটি শিকল। যার নীচে গোলাকার একটি বেড়ী রয়েছে, যার মধ্যে মাথা ঢুকানো যায়। ইবাদতে কাহিল হয়ে পড়লে বা ঝিমুনি আসলে এটা মাথায় ঢুকিয়ে দিতেন, যাতে ঘুমিয়ে না পড়েন। সেখানে একটি সিন্দুক পেলেন, যার মধ্যে একটি টুকরী পেলেন। যাতে ছিল একটি জামা ও একটি ছোট পাজামা।

আর তাঁর পরিত্যক্ত বস্ত্তর মধ্যে তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে পেলেন, তালি দেওয়া একটা জামা ও একটি মোটা জীর্ণশীর্ণ চাদর। এ অবস্থা দেখে খলীফা কেঁদে ফেললেন এবং অভিযোগকারী ভাতিজা ওমর ইবনে ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালেক লজ্জিত হয়ে বললেন, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ আমি কেবল লোকমুখে শুনেই অভিযোগ করেছিলাম।[9]

(৮) সিরিয়া বিজেতা সেনাপতি আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ (রাঃ) যুদ্ধ কৌশল হিসাবে সিরিয়া থেকে আপাততঃ সৈন্যদল পিছিয়ে অন্যত্র চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। ফলে সিরিয়ার খৃষ্টান নেতৃবৃন্দকে ডেকে তিনি তাদের নিকট থেকে গৃহীত জিযিয়া কর তাদের ফেরত দিলেন। এতে শহরের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা দলে দলে এসে ক্রন্দন করতে লাগল ও আকুতি-মিনতি করে বলতে লাগল, আপনারাই আমাদের এলাকা শাসন করুন। আমাদের স্বজাতি খৃষ্টান যালেম শাসকদের হাতে আমাদেরকে পুনরায় ন্যস্ত করবেন না। সেনাপতি বললেন, ‘আপনাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব যেহেতু নিতে পারছি না, সেহেতু আপনাদের প্রদত্ত জিযিয়া কর আমরা রাখতে পারি না’।[10] হাক্কুল ইবাদ রক্ষার এই অনুপম দৃষ্টান্ত দেখে তারা বিমোহিত হ’ল। ফলে তখন থেকে আজও সিরিয়া ১০০% মুসলিম দেশ।

(৯) সিন্ধু বিজয়ী তরুণ সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসিম মাত্র সাড়ে তিন বছর পর যখন রাজধানী দামেষ্ক ফিরে যান, তখন সিন্ধুর অমুসলিম নাগরিকগণ তাকে রাখার জন্য রাস্তায় কেঁদে গড়াগড়ি দিয়েছিল। পরে মিথ্যা অজুহাতে তাঁর মৃত্যুদন্ডের খবর শুনে তারা অনেকে তাঁর ‘মূর্তি গড়ে পূজা’ শুরু করেছিল।[11]

(১০) বাদশাহ আওরঙ্গযেব বিশাল ভারতবর্ষের একচ্ছত্র সম্রাট হওয়া সত্ত্বেও রাজকোষ থেকে কোন  বেতন-ভাতা  নিতেন না। নিজ হাতে টুপী সেলাই করে আর কুরআন মজীদ কপি করে যা পেতেন, তাই দিয়ে অতি কষ্টে দিন গুযরান করতেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও গভীর রাতে উঠে তাহাজ্জুদে দন্ডায়মান হয়ে কেঁদে চক্ষু ভাসাতেন।

তাঁর জীবনের অসংখ্য শিক্ষনীয় ঘটনাবলীর মধ্যে একটি ছিল নিম্নরূপঃ তাঁর একজন মুসলিম সেনাপতি পাঞ্জাব অভিযানকালে একটি গ্রাম অতিক্রম করছিলেন। সে সময় একজন ব্রম্মণের পরমা সুন্দরী এক মেয়েকে দেখে তিনি তার পিতার কাছে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। পিতা অনন্যোপায় হয়ে বাদশাহর শরণাপন্ন হলেন। ওয়াদা অনুযায়ী উক্ত সেনাপতি একমাস পরে বরবেশে উক্ত ব্রাম্মণের বাড়ীতে উপস্থিত হলেন। কিন্তু ঘরে প্রবেশ করেই দেখলেন ছদ্মবেশী সম্রাট আলমগীর উলঙ্গ তরবারি হাতে স্বয়ং তার সম্মুখে দন্ডায়মান। ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে সেনাপতি সেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। গ্রামবাসী হিন্দুরা ঐদিন থেকে গ্রামের নাম পাল্টিয়ে রাখলো ‘আলমগীর’। যে কামরায় বসে বাদশাহ আলমগীর ঐ রাতে এবাদতে রত ছিলেন, ঐ কামরাটি আজও হিন্দুদের নিকট পবিত্র স্থান বলে সম্মানিত হয়ে আছে। কেউ সেখানে জুতা পায়ে প্রবেশ করে না।[12]

এগুলো ছিল পূর্ণ তাক্বওয়ার সাথে যথাযথভাবে হাক্কুল ইবাদ রক্ষার দুনিয়াবী পুরষ্কার। এছাড়া আল্লাহর নিকটে অঢেল পুরষ্কার তো রয়েছেই। ‘ইনসানে কামেল’গণ যালেমদের হাতে লাঞ্ছিত হ’লেও সাধারণ মানুষ এবং আল্লাহর্ নিকটে তারা অশেষ পুরষ্কারে ভূষিত হন। জগৎ সংসার সর্বদা তাদেরকেই স্মরণ করে।


[1] আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৭/৪২০।

[2] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৯০, ‘যাকাত’ অধ্যায়

[3] ড. আলী মুহাম্মাদ সালাবী, সীরাতে উমার ইবনিল খাত্তাব (রাঃ), পৃঃ ২/৪।

[4] তারীখুত ত্বাবারী (বৈরুতঃ ১৪০৭ হিঃ) ২/৪৬৫

[5]. ইউসুফ কান্দালভী, হায়াতুছ ছাহাবা (বৈরুতঃ মাকতাবাতুর রিসালাহ, ১৯৯৯) পৃঃ ৩/১৪৮-১৪৯। আল-আওয়ায়েল লিল আসকারী, পৃঃ ৪৩।

[6]. আইয়ামে খিলাফতে রাশেদাহ পৃঃ ১০৩-১০৪

[7]. ড. আলী মুহাম্মাদ সালাবী, সীরাতে উমার ইবনিল খাত্তাব (রাঃ), পৃঃ ১৩৪

[8]. ড.আলী মুহাম্মাদ সালাবী, সীরাতে উমার ইবনিল খাত্তাব (রাঃ), পৃঃ ৮০

[9] আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৯/২২৩

[10]. বালাযুরী, ফুতুহুল বুলদান, পৃঃ ১৩৪

[11]. মুহিববুদ্দীন আল-খাত্বীব, মা‘আর রা‘ঈলিল আউয়াল (বৈরুতঃ দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৯৮৫) পৃঃ ২০০; বালাযুরী, ফুতুহুল বুলদান, পৃঃ ৪৪৬।

[12]. ইতিহাসের ইতিহাস পৃঃ ১৬৬