ইহসান ইলাহী যহীর

মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি : জ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন

ইহসান ইলাহী যহীর ১৯৬০ সালে জামে‘আ সালাফিইয়াহ (লায়ালপুর, ফয়ছালাবাদ, পাকিস্তান) থেকে ফারেগ হওয়ার পর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদগ্র বাসনায় পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের উৎসাহে ১৯৬৪ সালে দ্বিতীয় পাকিস্তানী ছাত্র হিসাবে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রথম পাকিস্তানী ছাত্র ছিলেন মাওলানা মুহাম্মাদ শরীফ আশরাফ। যিনি পরবর্তীতে ওখানকার শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হন। এখানে ভর্তি হওয়ার পর তিনি আরবী ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য আরব ছাত্রদের সাথে থাকতেন ও তাদের সাথে বেশী বেশী মিশতেন। এর ফলে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে যহীর আরবীতে  কথা বলা, বক্তব্য দেয়া ও লেখার যোগ্যতা অর্জন করেন।[1] যহীর বলেন, ‘মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানকালে আমি আরবী বলার দক্ষতা অর্জন করি। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমিই একমাত্র অনারব ছাত্র ছিলাম যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরব ছাত্রদের সাথে কোন প্রকার ইতস্ততঃ ছাড়াই আরবী বলত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আরব ছাত্র একথা বলতে পারত না যে, সে আমার চেয়ে ভাল আরবী বুঝতে বা বলতে পারে। আমার প্রচুর আরবী কবিতা মুখস্থ ছিল এবং আমি কুরআন মাজীদের হাফেযও ছিলাম। এজন্য আরবী ভাষায় খুব সুন্দরভাবে কথা বলতে পারতাম’।[2]

মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যেসব শিক্ষকের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন- বিশ্ববরেণ্য মুহাদ্দিছ, মুহাক্কিক্ব শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (১৯১৪-১৯৯৯), সঊদী আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী, বিশ্ববিখ্যাত সালাফী বিদ্বান শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (১৩৩০-১৪২০ হিঃ/১৯৯৯), তাফসীর ‘আযওয়াউল বায়ান’ এর রচয়িতা শায়খ মুহাম্মাদ আমীন আশ-শানক্বীতী (১৩২০-১৩৯৩ হিঃ), শায়খ আব্দুল কাদের শায়বাতুল হামদ মিসরী (জন্ম : ১৩৪০ হিঃ), শায়খ আতিয়াহ মুহাম্মাদ সালিম (১৩৪৬-১৪২০ হিঃ), শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ, শায়খ মুহাম্মাদ মুনতাছির কাত্তানী (১৩৩২-১৪১৯ হিঃ), শায়খ হাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ আল-আনছারী (১৩৪৪-১৪১৮ হিঃ), শায়খ আবূ বকর আল-জাযায়েরী (জন্ম : ১৯২১), ড. মুহাম্মাদ সুলায়মান আল-আশক্বার, শায়খ মুহাম্মাদ শুক্বরাহ, আব্দুল গাফফার হাসান রহমানী (১৯১৩-২০০৭ খ্রিঃ) প্রমুখ।[3]

যহীরের বন্ধু ড. লোকমান সালাফী বলেন, ‘তিনি ক্লাস থেকে বের হয়ে যুগ্রশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)-কে অনুসরণ করতেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কঙ্করের উপর তাঁর সামনে বসে হাদীছ, উছূলে হাদীছ (হাদীছের মূলনীতি শাস্ত্র), হাদীছের বর্ণনাকারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন এবং অনেক বিষয় তাঁর সাথে আলোচনা-পর্যালোচনা করতেন। দরাযদিল শায়খ আলবানীও যহীরের কথা শুনতেন এবং তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিতেন।[4]

১৯৬৭ সালে তিনি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরী‘আহ অনুষদ থেকে গ্রাজুয়েশন সমাপ্ত করেন। ফাইনাল পরীক্ষায় ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে ৯২টি দেশের ছাত্রদের মাঝে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।[5]

কোন কোন শিক্ষক বিদ্যাবত্তায় তাঁর চেয়ে কম হলেও তিনি তাঁদের সামনে ভদ্র ও অনুগত ছাত্রের মতো বসতেন এবং তাদেরকে যথাযথভাবে শ্রদ্ধা করতেন। শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে তিনি প্রাচীন আলেমদের পদাংক অনুসরণ করে আরবী ব্যাকরণের আলফিয়া ইবনে মালেক, শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভীর আল-ফাওযুল কাবীর, ইবনু হাজার আসক্বালানীর নুখবাতুল ফিকার ফী মুছত্বালাহি আহলিল আছার, তালখীছুল মিফতাহ প্রভৃতি গ্রন্থের মতন (Text) মুখস্থ করেছিলেন। অসংখ্য হাদীছ এবং আরবী, ফার্সী ও উর্দূ কবিতা তাঁর মুখস্থ ছিল।[6]


[1]. মুহাম্মাদ খালেদ সাইফ, ‘মাতায়ে দ্বীন ও দানেশ জো লুট গায়ী’, মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ১২৭; শাহাদত, মার্চ ২০০৮, পৃঃ ২২; ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৮৫।

[2]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৪৩।

[3]. মুহাম্মাদ বাইয়ূমী, আল-ইমাম আল-আলবানী (কায়রো : দারুল গাদ আল-জাদীদ, ১ম প্রকাশ, ১৪২৭ হিঃ/২০০৬), পৃঃ ১৪৩; মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-২, পৃঃ ১১৭; ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত,  পৃঃ ১১২-১২২; মাসিক ‘ছাওতুল উম্মাহ’ (আরবী), বেনারস : জামে‘আ সালাফিয়া, জানুয়ারী ২০১৩, পৃঃ ৫০।

[4]. ‘আল-ইস্তিজাবাহ’, সংখ্যা ১১, যুলক্বা‘দাহ ১৪০৭ হিঃ, পৃঃ ৩৩।

[5]. শাহাদত, মার্চ ২০০৮, পৃঃ ২২; মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-২, পৃঃ ১১৮, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৪৫, ১২৭।

[6]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৮৭-৮৮।