ইহসান ইলাহী যহীর

চিন্তাধারা

মুসলিম ঐক্য : মুসলিম ঐক্য সম্পর্কে আল্লামা যহীর বলেন, ‘ইসলামী দলসমূহ এবং মাযহাবী গোষ্ঠীগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য প্রয়োজন স্রেফ কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ। কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণই যাবতীয় মতপার্থক্য অবসানের মাধ্যম হতে পারে। যদি সব দল ঈমানদারির সাথে নিজেদের মাযহাবী গোঁড়ামী ছেড়ে এবং দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে নিজেদের মাসআলাগুলোকে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী ফায়ছালা করে এবং যে মাসআলা ঐ দু’টির বিপরীত হবে সেটা ছেড়ে দেয়, তাহলে এভাবে ঐক্য হতে পারে’।[1]

তিনি ‘আল-ব্রেলভিয়া’ গ্রন্থের ভূমিকায় এ সম্পর্কে আরো বলেন,

ان الاتحاد والاتفاق لايتأتى دون الاتفاق والاتحاد في العقائد والأفكار وإن الوحدت لا تتحقق مادام الآراء والمعتقدات لم تتوحد لأن الاتحاد والوحدت عبارت عن الاتفاق في المبدأ والوجهت. فعلينا جميعا أن نتحد ونتفق بالرجوع إلى كتاب الله وسنت رسوله صلى الله عليه وسلم وبتصحيح العقائد في ضوئهما ونترك العصبيات والتمسك بأقوال الرجال والتتبع طرق الصوفيت والخرافات.

‘আক্বীদা ও চিন্তাধারার ঐক্য ছাড়া কোন ঐক্য সম্ভব নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত চিন্তাধারা ও আক্বীদার ঐক্য না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত (প্রকৃত) ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে না। কেননা ঐক্যের অর্থই হল মূলনীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির ঐক্য। কাজেই আমাদের সবার উচিত কুরআন ও সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তন। এর আলোকে আক্বীদা সংশোধন, মাযহাবী গোঁড়ামি ও ব্যক্তির মতামত পরিহার এবং ছূফী ও কুসংস্কারবাদীদের পথ ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হওয়া’।[2]

ইজতিহাদ : কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায়ে ছাহাবার মধ্যে স্পষ্ট পাওয়া যায় না এমন বিষয়ে শারঈ হুকুম নির্ধারণের জন্য সার্বিক অনুসন্ধান প্রচেষ্টা নিয়োজিত করাকে ইসলামী শরী‘আতের পরিভাষায় ইজতিহাদ বলে। কিয়ামত পর্যন্ত সকল যোগ্য আলেমের জন্য এর দ্বার উন্মুক্ত থাকবে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু ইসলামে ইজতিহাদের প্রবক্তাই নই; বরং আমি একথাও বলি যে, এদেশে ইজতিহাদের স্বাধীনতা থাকা উচিত। তবে এক্ষেত্রে আমি বল্গাহীন স্বাধীনতার পক্ষে নই। এক্ষেত্রে এমন স্বাধীনতা থাকাও উচিত নয় যা কুফরী এবং ফাসেকী ও ফিতনা-ফ্যাসাদের দরজা উন্মুক্ত করে দিবে’।[3]

দেশে কোন ফিকহ চলবে : এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা কোন ফিকহের-ই বাস্তবায়ন চাই না। কেননা লোকেরা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় কোন নির্দিষ্ট ফিকহ বাস্তবায়নের জন্য জীবন উৎসর্গ করেনি। ইসলামের নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এবং এখানে স্রেফ কুরআন ও সুন্নাহর ইসলাম বাস্তবায়ন হওয়া উচিত। কুরআন ও সুন্নাহ এমন দু’টি জিনিস যার উপর সকল শ্রেণী ও রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত হতে পারে’।[4]



[1]. ঐ, পৃঃ ৬২।

[2]. আল-ব্রেলভিয়া, পৃঃ ১১।

[3]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৬১।

[4]. ঐ, পৃঃ ৫৯।