ইহসান ইলাহী যহীর

ঘাতক কে?

আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর কাদিয়ানী, শী‘আ, ব্রেলভী প্রভৃতি বাতিল ফিরকাগুলোর বিরুদ্ধে ছিলেন মূর্তিমান চ্যালেঞ্জ। তিনি এদের বিরুদ্ধে দলীলভিত্তিক বইপত্র লিখে ও অগ্নিঝরা বক্তৃতা প্রদান করে তাদের স্বরূপ বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচন করেছিলেন। স্বভাবতই তারা তাঁর ওপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ ছিল। তারা তাঁকে পত্রযোগে ও টেলিফোনে একাধিকবার প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছিল। মাওলানা আতাউর রহমান শেখুপুরী ৩/৪/১৪২১ হিজরীতে আল্লামা যহীরের উপর পিএইচ.ডি ডিগ্রী অর্জনকারী ড. যাহরানীকে জানান, একদিন এক ব্যক্তি আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীরকে দেওয়ার জন্য একটি পত্র আমাকে দেয়। তাতে লেখা ছিল, ‘আমরা অচিরেই আপনাকে হত্যা করব’। ইরানী বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেনী ঘোষণা করেছিলেন, ‘যে ব্যক্তি ইহসান ইলাহী যহীরের মাথা কেটে আনতে পারবে তাকে ২ লাখ ডলার পুরস্কার দেয়া হবে’। অনেকে ঘোষণা করেছিল, ‘যে ইহসান ইলাহী যহীরকে হত্যা করতে পারবে সে শহীদ’। শত্রুরা তাঁকে হুমকি প্রদান করে এমনটিও বলেছিল যে, ‘আপনি যখন রাস্তায় হাঁটবেন, তখন আমরা আপনার ওপর দাহ্য পদার্থ নিক্ষেপ করব’। তিনি অনেকবার মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছিলেন। শত্রুরা তাঁকে উদ্দেশ্য করে একবার গুলিও চালিয়েছিল। আমেরিকায় একবার তিনি প্রায় নিহত হতেই বসেছিলেন।[1]

বাতিলপন্থীদের এতো হুমকি-ধমকি ও প্রাণ নাশের তর্জন-গর্জন সত্ত্বেও তিনি ছিলেন বেপরোয়া। এসবকে তিনি বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে সর্বদা নির্ভয়ে চলতেন। ভয় করতেন স্রেফ আল্লাহকে; পৃথিবীর অন্য কাউকেই নয়। তিনি তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতায় সূরা তওবার ৫১ (‘হে নবী আপনি বলুন! আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের কাছে পৌঁছবে না’) ও সূরা আ‘রাফের ৩৪ আয়াত (‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একটি মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের মেয়াদ এসে যাবে, তখন তারা না এক মুহূর্ত পিছে যেতে পারবে, আর না এগিয়ে আসতে পারবে’) প্রায়ই পেশ করতেন। তিনি ইবনে আববাস (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত হাদীছটিও উল্লেখ করতেন,

وَاعْلَمْ أَنَّ الْأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَّنْفَعُوْكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوْكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ لَكَ، وَلَوِ اجْتَمَعُوْا عَلَى أَنْ يَّضُرُّوْكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوْكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ.

‘জেনে রেখ! যদি সমস্ত মাখলূক একত্রিত হয়ে তোমার কোন উপকার করতে চায়, তবুও আল্লাহ তোমার ভাগ্যে যতটুকু লিখে রেখেছেন সেটুকু ছাড়া তারা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না। অনুরূপভাবে তারা যদি সমবেতভাবে তোমার কোন ক্ষতি করতে চায়, তাহলেও আল্লাহ তোমার ভাগ্যে যতটুকু লিখে রেখেছেন সেটুকু ছাড়া কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[2]

আল্লামা যহীর সঊদীতে রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে বলেছিলেন, ‘আমি বিভিন্ন ফিরকার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছিলাম এবং আমার সমালোচনা তাদের মনঃপীড়ার কারণ হচ্ছিল। তারা এর সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ হচ্ছে’।[3]

কুয়েতের ‘আল-মুজতামা’ পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘বাতিল ফিরকাগুলোর মত খন্ডন ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদার স্বরূপ  উন্মোচনে তিনি অত্যন্ত দৃঢ় ছিলেন। তাঁর বই-পুস্তক ও বক্তৃতায় কঠোর খন্ডন পদ্ধতির কারণে এই সমস্ত ভ্রান্ত ফিরকা তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি তাদের টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন। কাদিয়ানীরা ইতিপূর্বে পাকিস্তানে বেশ কয়েকজন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আলেমকে গুম ও খুন করে। ব্রেলভীদের সাথেও তাঁর কঠিন শত্রুতা ছিল।[4] ড. আব্দুল আযীয আল-ক্বারী বলেন, ويبدو أن أسلوبه كان شديد النكاية بالرافضة إلى درجة أنهم آثروا قتله. ‘তাঁর খন্ডন পদ্ধতি রাফেযীদের (চরমপন্থী শী‘আ) এতটাই অন্তর্জ্বালার কারণ ছিল যে, তারা তাঁকে হত্যা করতে মনস্থির করে’।[5]

মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ও ‘রাবেতা আলমে ইসলামী’র সাবেক সহ-সেক্রেটারী শায়খ মুহাম্মাদ বিন নাছের আল-‘আবূদী বলেন,

قتل الشيخ بعد تخطيط وبعد محاولة من المبتدعة، ومن المنحرفين عن الإسلام، وربما كانت وراءهم أيادي كبيرة تعمل على قتل الشيخ لأنه كان سيفا مصلتا على أعداء الإسلام الذين يحبون أن يغمدوا هذا السيف.

‘বিদ‘আতী ও ইসলাম থেকে বিচ্যুতদের পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টায় শায়খকে হত্যা করা হয়। হয়ত তাদের পিছনে বড় কোন হাত থাকতে পারে, যারা তাঁকে হত্যার ব্যাপারে ইন্ধন যোগায়। কেননা ইসলামের শত্রুদের জন্য তিনি ছিলেন চকচকে ধারালো তরবারির ন্যায়। যারা এই তরবারিকে কোষবদ্ধ (নিহত) করতে চাচ্ছিল’।[6]



[1]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬৪।

[2]. তিরমিযী হা/২৫১৬, অধ্যায়-৩৫, অনুচ্ছেদ-৫৯; মিশকাত হা/৫৩০২ ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায়, ‘আল্লাহর উপর ভরসা ও ছবর’ অনুচ্ছেদ, হাদীছ ছহীহ।

[3]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-২, পৃঃ ১৪২।

[4]. ‘আল-মুজতামা’, কুয়েত, সংখ্যা ৮১২, বর্ষ ১৩, ৯ শা‘বান ১৪০৭ হিজরী।

[5]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬৫।

[6]. ঐ, পৃঃ ৬৯-৭০।