ইহসান ইলাহী যহীর

বাগ্মী হিসাবে যহীর

বাল্যকাল থেকেই ইহসান ইলাহী যহীরের বক্তৃতার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল। অনলবর্ষী বাগ্মী হওয়ার স্বপ্নের জাল তিনি আশৈশব বুনতেন। এক সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাল্যকাল থেকেই বক্তৃতার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। আমার ফুফা প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী মাওলানা আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহঃ)-এর মাজলিসে আহরার-এর সদস্য এবং তার অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন। মাওলানা আতাউল্লাহ শাহ বুখারীর বক্তৃতার কথা আমাদের বাড়িতে প্রায়ই আলোচিত হ’ত এবং বাল্যকাল থেকেই আমার মনে এই আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছিল যে, আমিও বড় হয়ে বক্তা হব। এ দৃষ্টিকোণ থেকে মাওলানা আতাউল্লাহ শাহ বুখারীর ব্যক্তিত্ব আমার জন্য অনুপ্রেরণা ছিল। আমি কুরআন মাজীদ মুখস্থ করে তারাবীহর ছালাত পড়াতে শুরু করি। এভাবে কুরআন মাজীদ তেলাওয়াতের মাধ্যমে আমার আগ্রহ বাড়তে থাকে এবং বয়স ও জ্ঞান বৃদ্ধির সাথে সাথে আমার বক্তৃতাশিল্পও সুদৃঢ় হ’তে থাকে’।[1]

মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন ১৯৬৬ সালে আরব ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মাঝে বক্তৃতা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম পুরস্কার অর্জন করেন। ফলে হজ্জের সময় মক্কায় হাজীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে দায়িত্ব প্রদান করে। তিনি প্রথমে উর্দূতে বক্তৃতা দিতেন। তারপর আরবীতে অনুবাদ করতেন।[2]

মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে হজ্জের সময় ভারতীয় ও পাকিস্তানী হাজীদেরকে হজ্জের মাসআলা-মাসায়েল বর্ণনা করার জন্য মসজিদে নববীতে যহীরের জন্য ‘বাবুস সঊদ’ (সঊদ দরজা) নির্দিষ্ট ছিল। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে উর্দূতে বক্তৃতা দিতেন। একদিন মসজিদে নববীতে প্রচুর লোক সমাগম হয়। তিনি তাঁর নির্দিষ্ট স্থানে বক্তৃতা দেয়া শুরু করার পর লক্ষ্য করেন যে, চতুস্পার্শ্বে ভারতীয় ও পাকিস্তানী হাজীরা ছাড়াও বহু সংখ্যক আরব হাজী অবস্থান করছেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে আরবীতে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। প্রথমে সামান্য বাধো বাধো ভাব হ’লেও দ্রুত তা দূর হয়ে যায় এবং অনুভব করেন যে, তিনি আরবী ভাষায় বক্তব্য দিতে সক্ষম। এরপর থেকে প্রত্যেক বছর হজ্জের মওসুমে সেখানে আরবীতে বক্তৃতা দিতেন।[3]

১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাঈল যুদ্ধের সময় মসজিদে নববীতে ইহূদীদের আক্রমণের আশংকায় মসজিদের বাতিগুলি বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন আল্লামা যহীরের তেজোদীপ্ত ঈমান তাঁর বাগ্মীসত্তাকে জাগিয়ে তুলে। ফলে তিনি সেখানে উপস্থিত লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে জিহাদের উপর অগ্নিঝরা বক্তৃতায় বলেন, ‘পৃথিবী সবসময় মদীনায় আগন্তুক কাফেলাগুলির পদভারে মুখরিত হওয়ার খবর শুনত। আর আজ আমরা মদীনার রাস্তাঘাটে ইহূদীদের আক্রমণের খবর শুনছি’। একথা বলার সাথে সাথে উপস্থিত যুবক ও বৃদ্ধদের ‘আল-জিহাদ’ ‘আল-জিহাদ’ শ্লোগানে মসজিদে নববী প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। গোটা মদীনায় যেন প্রতিশোধের বহ্নিশিখা প্রজ্বলিত হয়।[4] সে সময় মসজিদে নববী যিয়ারত করছিলেন আরব বিশ্বের খ্যাতিমান বাগ্মী মোস্তফা আস-সিবাঈ। তিনি শ্লোগান শুনে এগিয়ে গিয়ে যহীরের বক্তব্য শুনেন। বক্তৃতা শেষে যহীরকে ডেকে বলেন, তোমার নাম কি? তিনি বললেন, ইহসান ইলাহী যহীর। সিবাঈ বললেন, তুমিই আমার পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখ। তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। সিবাঈ বললেন, كنت أظن نفسي أخطب العرب ولكن حينما رأيتك اليوم وسمعتك عرفت أنك أخطب العرب ‘আমি নিজেকে আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ বাগ্মী বলে মনে করতাম। কিন্তু আজ তোমাকে দেখে ও তোমার বক্তব্য শুনে আমি বুঝতে পারলাম যে, তুমিই  আরবের শ্রেষ্ঠ বাগ্মী’।[5]

মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই তাঁর বিদ্যাবত্তা ও বক্তৃতার খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে আসার পর তিনি ১৯৬৮ সালে লাহোরের ‘প্রাচীন ও প্রথম আহলেহাদীছ জামে মসজিদ’ বলে কথিত[6] চীনাওয়ালী মসজিদের খতীব নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু এ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর আগুনঝরা জুম‘আর খুৎবা শোনার জন্য লাহোরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ মসজিদে লোকজনের ঢল নামত।[7] এখানে খুৎবা প্রদানের ব্যাপারে তিনি খুবই আগ্রহী ছিলেন। দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ তিনি এখানে খুৎবা প্রদান করেন। যার সুযোগ তিনি খুব কমই হাতছাড়া করতেন।[8]

ছাত্রজীবন থেকেই আল্লামা যহীর বক্তব্য দেয়া শুরু করলেও চীনাওয়ালী মসজিদের খতীব নিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই মূলত তাঁর নিয়মতান্ত্রিক বক্তৃতার নবযাত্রা শুরু হয়। মাতৃভাষা পাঞ্জাবী হ’লেও তিনি সবসময় উর্দূতে বক্তৃতা দিতেন। দেশের যে প্রান্তেই বক্তৃতা দিতে যেতেন সেখানেই প্রচুর লোক সমাগম হ’ত। শ্রোতা সংখ্যা লাখ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকত। মুক্বাল্লিদরাও তাঁর বক্তব্য শুনতে যেত। যেকোন বিষয়েই বক্তব্য দিয়ে বাজিমাত করতেন। অধিকাংশ মানুষ তাঁকে ‘সুরেশে ছানী’ (দ্বিতীয় সুরেশ) বলত। বক্তব্যের হক তিনি যথাযথ আদায় করতেন। কুরআন ও হাদীছ থেকে দলীল এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর উদাহরণ পেশ করতেন।[9] উল্লেখ্য যে, আগা সুরেশ কাশ্মীরী (১৯১৭-১৯৭৫) উপমহাদেশের খ্যাতনামা বাগ্মী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন।[10]

১৯৬৮ সালে আইয়ূব খানের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও কেউ টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করার দুঃসাহস দেখাত না। করলেই জেলে পুরে নাস্তানুবাদ করা হ’ত। এমনই এক সন্ধিক্ষণে আল্লামা যহীর লাহোরে ঈদের মাঠে এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। এ সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘১৯৬৮ সালের ঘটনা। আমি মূলতঃ চীনাওয়ালী মসজিদের খতীবের পদে আসীন ছিলাম। সেই সময় ফিল্ড মার্শাল আইয়ূব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছিল। ইকবাল পার্কে- যাকে মিন্টু পার্কও বলা হয়, চীনাওয়ালী মসজিদের খতীব হিসাবে ঈদের জামা‘আতে ইমামতি করার দায়িত্ব পেয়েছিলাম। মাওলানা দাঊদ গযনবীর সময় থেকেই ইকবাল পার্কের ঈদের জামা‘আতকে লাহোরে ‘ঈদে আযাদগাঁ’ রূপে আখ্যায়িত করা হ’ত এবং এখানকার জামা‘আত লাহোরের কয়েকটি বড় ঈদের জামা‘আতের মধ্যে গণ্য হ’ত।

এ সময় ঈদের কয়েকদিন পূর্বে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ আনওয়ার-এর উপরে পুলিশের উদ্ধত আচরণের ফলে লাহোর শহরে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচন্ড ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। লোকদের প্রত্যাশা ছিল, ঈদে আযাদগাঁর খুৎবায় আইয়ূব খানের সরকারকে সমালোচনার লক্ষ্যবস্ত্ততে পরিণত করা হবে। এজন্য ঈদের পূর্বেই আমার কাছে প্রতিনিধি দল আসা শুরু হয়ে যায়। কিছু লোকের ধারণা ছিল, আমি রাজনীতিবিদ নই। সুতরাং আমি অনুমতি দিলে তারা ওখানকার খুৎবার জন্য এমন ব্যক্তিকে নিয়ে আসবেন, যিনি ঐ ঈদের জামা‘আতের ইমামের মর্যাদা, ভাবমূর্তি ও সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখবেন। তখন আমি ঐ বন্ধুদের নিশ্চিন্ত থাকতে বলি। অতঃপর সেদিন ঈদের খুৎবায় আমি যে বক্তব্য দিয়েছিলাম তাকে আমার জীবনে প্রথম রাজনৈতিক বক্তব্যও বলা যেতে পারে। আমার ঐ বক্তব্যের প্রভাব এতই গভীর ছিল যে, (বক্তব্যের পর) অনেক মানুষ আবেগের আতিশয্যে নিজেদের জামা ছিঁড়ে ফেলেছিল। আমার স্মরণ আছে, আগা সুরেশ কাশ্মীরীও উক্ত ঈদের খুৎবার শ্রোতা ছিলেন। ঈদের ছালাতের পর আমাকে উনি মিয়াঁ আব্দুল আযীয বার এট ল-এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করেন, ‘আমি নিজেই বক্তৃতা শিল্পে অনেক দক্ষতা রাখি। কিন্তু আমি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বলতে পারি, ইহসান ইলাহী! যদি তুমি ভবিষ্যতে বক্তৃতা দেয়া ছেড়েও দাও তাহ’লে তোমার এই এক বক্তৃতার দ্বারাই তোমাকে পাক-ভারতের কতিপয় বড় বক্তাদের মাঝে গণ্য করা যেতে পারে’।[11]

মিয়াঁ আব্দুল আযীয ঐ সময় বলেছিলেন, ‘যদি পাক-ভারতের বাগ্মীদের উল্লেখযোগ্য বক্তব্যগুলোকে একত্রিত করা হয় তাহ’লে এই বক্তব্যই শীর্ষস্থানে থাকবে’।[12]

১৯৮৭ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার এশার ছালাতের পর শিয়ালকোটের ইকবাল রোডে অবস্থিত আহলেহাদীছ জামে মসজিদে ষষ্ঠ কুরআন ও হাদীছ মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে আল্লামা যহীর তাওহীদের উপর এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন। মাসূনন খুৎবা পাঠের পর কুরআন মাজীদের সূরা আ‘রাফের ১৫৮ আয়াত তেলাওয়াতের মাধ্যমে তিনি তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিকট জীবিত ব্যক্তিদের ভয় করাও শিরক এবং মৃত ব্যক্তিদের ভয় করাও শিরক। আমরা তাওহীদের তত্ত্বাবধায়ক। আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেই ভয় করি না। আর যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে চিরস্থায়ী ও চিরঞ্জীবের ভয় স্থান দেয়, তিনি তাকে সৃষ্টিজগতের ভয় থেকে মুক্ত করে দেন। এই শিক্ষাই আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) দিয়েছেন’। তিনি আরও বলেন, ‘শুনুন! তাওহীদের সবচেয়ে বড় উপকারিতা এই যে, তাওহীদী আক্বীদা পোষণের পর মানুষ গায়রুল্লাহর ভয় থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যায়। এরপর সে আর কাউকে ভয় করে না। কারণ তাওহীদপন্থীর এ দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি হয় যে, لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ يُحْيِىْ وَيُمِيْتُ   ‘তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তিনিই জীবিত করেন এবং তিনিই মৃত্যু দান করেন’ (আ‘রাফ ৭/১৫৮)। মরণও তাঁর আয়ত্ত্বাধীন এবং জীবনও তাঁর আয়ত্ত্বাধীন। তিনি ব্যতীত কেউ মারতে পারেন না, কেউ জীবিত করতেও পারে না। যার বিশ্বাস এরূপ হবে সমগ্র সৃষ্টিজগত তার কিছুই করতে পারবে না’। এরপর আহলেহাদীছদেরকে সম্বোধন করে তিনি দরদমাখা কণ্ঠে বলেন,

اهل حديثو! الله كا تم  پر انعام  ہے كہ تم توحيدوالوں كے گهر ميں  پيدا  ہوئے ہو- تمہيں نهيں معلوم  توحيد  كى  قدر كياہے؟  توحيد كى قدر كسى سے پوچهنى ہے تو  اس سے پوچهو جس كو الله نے بعد ميں ہدايت دى ہے-

‘আহলেহাদীছগণ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ হ’ল তোমরা তাওহীদপন্থীদের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছ। তাওহীদের মর্যাদা কি- তা তোমাদের জানা নেই? তাওহীদের মর্যাদা জানতে চাইলে ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস কর যাকে আল্লাহ পরে হেদায়াত দান করেছেন’।

او لوگو! توحيد كى قدر پوچهنى ہے تو ان سے پوچهو، جو شرك كى پستيوں سے نكل كر توحيد كى بلنديوں پہ آئے- اهل حديثو! كعبہ كے رب كى قسم، تم زندگى كى آخرى لمحات تك اگر خدا  كا  شكر ادا كرتے رہو، تو  اس كے كئے ہوئے انعام كا شكر ادا نهيں كر سكتے كہ الله نے تمہيں اپنى توحيد كا علمبردار بنايا ہے-

‘ওহে লোকসকল! তাওহীদের মর্যাদা জানতে চাইলে ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস কর, যে শিরকের নীচুতা থেকে বের হয়ে তাওহীদের উচ্চতায় পৌঁছেছে। আহলেহাদীছগণ! কা‘বার রবের কসম! তোমরা যদি জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে থাক তাহ’লেও তাঁর কৃত (এই) অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করতে পারবে না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে স্বীয় তাওহীদের ধারক-বাহক বানিয়েছেন’। তিনি আরো বলেন, ‘আজ আমাদের দেশ, জাতি ও জনগণের যত রোগ আছে সেগুলোর মূল হ’ল শিরক’।[13]

আরবী ভাষাতেও আল্লামা যহীর চমৎকার বক্তৃতা দিতেন। যা ইতিপূর্বে বলা হয়েছে। যখন তিনি এ ভাষাতে বক্তব্য দিতেন তখন মনে হ’ত এটা তাঁর মাতৃভাষা। বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রে তিনি আরবীতে বক্তৃতা দিয়েছেন। আরবী ভাষার বড় বড় পন্ডিত তাঁর আরবী বক্তৃতা শুনে প্রভাবিত হয়েছে। একজন অনারবের মুখ থেকে বিশুদ্ধ আরবী ভাষায় বক্তৃতা শুনে তারা বিস্ময়াভিভূত হয়ে যেত। মোদ্দাকথা, তিনি আরবী ও উর্দূ উভয় ভাষায় প্রথম সারির বক্তা ছিলেন।[14]

শায়খ আব্দুল আযীয আল-ক্বারী বলেন,وكان بالأردية خطيبا مؤثرا بارعا يهيج الجماهير. ‘তিনি উর্দূতে প্রভাব বিস্তারকারী অসাধারণ বক্তা ছিলেন। তিনি জনগণকে আন্দোলিত করতেন’।

মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর শায়খ মুহাম্মাদ বিন নাছের আল-‘আবূদী বলেন, كان خطيبا مةفوقا قليل النظير في فصاحةه وخاصة باللغة العربية ‘তিনি  শ্রেষ্ঠ বাগ্মী ছিলেন। শুদ্ধভাষিতায় বিশেষ করে আরবী ভাষায় তাঁর সমকক্ষ খুব কমই ছিল’।[15]

ড. লোকমান সালাফী বলেন, ‘তিনি কয়েক ঘণ্টা ব্যাপী বক্তৃতা করতেন। আর তাঁর হাতে থাকত কুরআন মাজীদ। তিনি সত্য প্রকাশ করতেন এবং নিরবচ্ছিন্ন ও অবিশ্রান্তভাবে বাতিলকে প্রতিরোধ করতেন। আর শ্রোতারা পিন-পতন-নীরবতার সাথে তাঁর বক্তব্য শ্রবণ করতো। তারা নড়াচড়া করত না এবং বিরক্তও হ’ত না। বরং আরো বেশিক্ষণ বক্তব্য দিতে বলত। এভাবে তিনি এক মসজিদ থেকে আরেক মসজিদ এবং এক স্টেজ থেকে আরেক স্টেজে ছুটে বেড়াতেন। যেন তিনি তাঁর সময়ে ইসলামের সবচেয়ে বড় মুখপাত্র এবং ইসলামের দুঃসাহসী প্রতিরক্ষক। ভীরুতা ও দুর্বলতা কী জিনিস তা তিনি জানতেন না’।[16]

তিনি ‘খতীবে মিল্লাত’ ও ‘খতীবে কওম’ রূপে সর্বমহলে বরিত হতেন। বিরোধী দলের অনেক লোকও বক্তব্য শেখার জন্য তাঁর কাছে আসত। পাকিস্তানীরা এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেন যে, তিনি ছিলেন পাকিস্তানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাগ্মী।[17]



[1]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৪৩।

[2]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২১৪।

[3]. ঐ, পৃঃ ৪৩-৪৪।

[4]. শাহাদত, মার্চ ২০০৮, পৃঃ ২২-২৩।

[5]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২১৩।

[6]. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, আহলেহাদীছ আন্দোলন (পিএইচ.ডি থিসিস), পৃঃ ৩৮২।

[7]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-২, পৃঃ ১১৮; শাহাদত, মার্চ ২০০৮, পৃঃ ২৩।

[8]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২১৩।

[9]. প্রফেসর মুহাম্মাদ ইয়ামীন মুহাম্মাদী, ‘ইসলাম কা বেবাক সিপাহী, বেমেছাল মুছান্নিফ ইহসান ইলাহী’ মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ১১৭।

[10]. তিনি আতাউল্লাহ শাহ বুখারী এবং মাওলানা আবুল কালাম আযাদের রাজনৈতিক শিষ্য ছিলেন। তিনি খাঁটি তাওহীদপন্থী এবং শিরক ও বিদ‘আতের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তার উল্লেখ্যযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে ছিল (১) মাওলানা আতাউল্লাহ শাহ বুখারীর জীবন ও চিন্তাধারা (২) মাওলানা আবুল কালাম আযাদের জীবন ও চিন্তাধারা (৩) তাহরীকে খতমে নবুঅত (৪) তাঁর প্রবন্ধ সংকলন ‘মাযামীনে সুরেশ’।

[11]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৫২।

[12]. শাহাদত, মার্চ ২০০৮, পৃঃ ২৩।

[13]. হাফেয হাফীযুল্লাহ, ‘শিয়ালকোট মেঁ শহীদে মিল্লাত হযরত আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর কা আখেরী ইয়াদগার খেতাব’, মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-২, পৃঃ ৩৮-৫২।

[14]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-২, পৃঃ ১২২, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ১১৭-১৮।

[15]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২১৬।

[16]. ‘আল-ইস্তিজাবা’, সংখ্যা ১২, যুলহিজ্জাহ ১৪০৭ হিঃ, পৃঃ ৩৩-৩৪।

[17]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২১৩, ২১৫।